• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শিশুর ঠান্ডা-কাশি : সাবধানতা ও ঘরোয়া চিকিৎসা

ছবি : সংগৃহীত

শিশু

শিশুর ঠান্ডা-কাশি : সাবধানতা ও ঘরোয়া চিকিৎসা

  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০১৮

শীত এসে গেছে। আবহাওয়ায় অনেক পরিবর্তন। এ সময় বড়দের পাশাপাশি শিশুদের সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর কিছু অসুখ বেশি হয়। আক্রান্ত হলে দুই-তিন দিন নাক বন্ধ থাকে। নাক দিয়ে পানি ঝরে। গলাব্যথা ও খুসখুস করে, শুকনো কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এগুলোর বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত। চিকিৎসা নিলে সাত দিন, চিকিৎসা না নিলেও সাত দিন। তার মানে বেশিরভাগ ভাইরাসজনিত ঠান্ডা-কাশিতে কোনো ওষুধ লাগে না। লক্ষণভিত্তিক কিছু চিকিৎসা অনেকসময় আরামদায়ক হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে শুকনো কাশি কিছুদিন ভোগাতে পারে।

একটু সতর্ক থাকলেই কিন্তু এগুলো এড়ানো সম্ভব। এই ঠান্ডা-কাশি খুব ছোঁয়াচে। একজনের কাছ থেকে সবার হয়ে যেতে পারে। তাই যার হয়েছে, তাকে অন্যদের সামনে হাঁচি-কাশি দেওয়া থেকে বিরত রাখুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন বা করতে বলুন। জনবহুল জায়গায় নিজেকে এবং শিশুকে সতর্ক রাখতে হবে। বাইরে বেরোলে নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। ধুলাবালি এবং ঠান্ডা থেকে দূরে থাকুন। শীতে অনেকেই গোসল করেন না, মনে করেন ঠান্ডা লেগে যাবে; কিন্তু এটা ভুল ধারণা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ধুলাবালি ও ভাইরাস থেকে দূরে রাখবে। ফলে সর্দি-কাশির ঝুঁকিও কমে যাবে। শিশুদের নিয়মিত গোসল করানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যাবশ্যকীয়। আরামদায়ক শীতের পোশাক, বিশেষ করে টুপি ও মোজা পরানো আবশ্যক। জুতা পরিয়ে রাখুন, খালি পায়ে ফ্লোরে বা মাটিতে হাঁটলে সহজেই ঠান্ডা লেগে যাবে। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার ও আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে দিন। ভিটামিন-সিযুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খেতে দিন। অনেকেই কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে কিংবা ঠান্ডা বেড়ে যাবে এমন কথা বলেন। আসলে কলা একটি নন-অ্যাসিডিক, লো গ্লাইসেমিক খাবার, যা গলা খুসখুস ও ঠান্ডা-সর্দিভাব কমায়।

সাধারণ ঠান্ডা-সর্দি-কাশিতে আপনার শিশুকে আরো বেশি বুকের দুধ খাওয়ান। অন্যান্য খাবার অব্যাহত রাখুন। মধু, তুলসীপাতার রস, আদা চা, লেবুর শরবত/ চা, হালকা গরম পানি অল্প অল্প করে খাওয়ান। হাতে-পায়ে সরিষার তেল আর রসুন মালিশ করলে কিছুটা আরাম পেতে পারে। কিন্তু নাক বন্ধ হলে নাকের ফুটোয় সরিষার তেল লাগানো ঠিক নয়। ঠান্ডার সময় স্বভাবতই পানি খাওয়ার পরিমাণ অনেক কমে যায়। এতে পানিশূন্যতা হয়ে গলা শুকিয়ে যায় এবং কাশি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই শিশুকে সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করান। ডিমের সাদা অংশ, গাজর, চিকেন স্যুপও ঠান্ডায় ভালো কাজ করে। শিশুর নাক পরিষ্কার রাখুন। এতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সুবিধা  হবে এবং খাওয়া বাড়বে। নাক পরিষ্কারের জন্য নরমাল স্যালাইন (লবণ পানি, খাবার স্যালাইন অথবা বাজারে প্রাপ্ত স্যালাইন ড্রপ) ব্যবহার করুন। একটু বড় বাচ্চারা সর্দি-গলা ব্যথা বা শুকনো কাশির জন্য লবণ-পানিতে গড়গড়া করতে পারবে। ঠান্ডায় নাক বন্ধ হয়ে গেলে গরম পানিতে মেনথল মিশিয়ে সেই ভ্যাপার নাক-মুখ দিয়ে টানলে বন্ধ নাক দ্রুতই খুলে যাবে।

অক্সিমেটাজলিন বা জাইলোমেটাজলিন নাকের ড্রপও ব্যবহার করা যাবে। তবে সাধারণ ঠান্ডা-সর্দি-কাশিতে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন না। কাশি হলেই কাশির ওষুধ খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন, রোগ সাধারণ হোক বা মারাত্মক, যে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াবেন, নিজের ইচ্ছামতো কিংবা অন্য কারো পরামর্শে নয়।

খেয়াল রাখুন শিশু ক্রমেই বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে কি-না, নেতিয়ে পড়ছে কি-না, হাসে না, খেলে না, তাকায় না। জ্বর আসছে কি-না, খেতে পারছে কি-না, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অথবা বেশি ঘন শ্বাস নিচ্ছে, শ্বাস নিতে বুকের নিচ দিকটা ডেবে যায়, বুকে শাঁই শাঁই বা চিঁ চিঁ শব্দ অথবা কাশি দীর্ঘস্থায়ী কি-না (দুই সপ্তাহ বা তার বেশি)। এমন হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ এগুলো বিপদচিহ্ন! এরকম হলে অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে। নেবুলাইজার দিতে হতে পারে। এক্সরে বা অন্য পরীক্ষা করা লাগতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রঙের কফ, সঙ্গে অনেক জ্বর থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সাবধান থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক : ডা. অমৃত লাল হালদার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads