• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
সহজেই সামলে নিন শিশুর জেদ

সংগৃহীত ছবি

শিশু

সহজেই সামলে নিন শিশুর জেদ

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৮ জুলাই ২০১৯

আড়াই বছরের আয়েশার জেদ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় মা শিলুফা খাতুনকে। চাকরি করেন বলে দিনের অনেকটা সময়ই থাকতে হয় অফিসে। তবে বাকি যে সময়টুকু পান, তার পুরোটাই দেওয়ার চেষ্টা করেন একমাত্র সন্তানকে। কিন্তু বাবা-মা বাড়ি ফেরার পর থেকেই আয়েশা সবকিছুতে জেদ করতে থাকে। তার সঙ্গে এটা-সেটা বায়না তো আছেই। যতই দিন যাচ্ছে, তার আবদার আর ছোট ছোট বিষয়ে জেদের প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

আয়েশাকে নিয়ে তো প্রায়ই বিপদে পড়তে হয় ওর মাকে। এক মুহূর্ত মাকে ছেড়ে থাকতে নারাজ সে। এক বছরের বড় ভাইকে কোনোভাবেই মায়ের কাছে ঘেঁষতে দেয় না সে। একবার যদি কোনো বিষয়ে না বলেছে তো সেটি কিছুতেই হ্যাঁ করানোর সাধ্য নেই কারো। আবদার পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না জুড়ে দেয়। আদর দিয়েও তখন লাভ হয় না।

শিশুদের এমন জেদের মুখোমুখি হন অনেক বাবা-মা-ই।

বাইরে গেছেন, কোনো কিছু পছন্দ হয়ে গেল তক্ষুনি সে জিনিসটি হাতে না পেলে সেখানেই চিৎকার, কান্নাকাটি করে হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটায়। বুঝিয়ে, আদর দিয়ে বা ধমকে কোনোভাবেই কাজ হয় না। অগত্যা বিব্রতকর অবস্থা এড়াতে তার ইচ্ছাই পূরণ করতে হয়। শিশুদের মধ্যে ১০ শতাংশ শিশু এমন হয়, যাদের সহজে মানানো যায় না। তবে জেদ সহজেই সামলে নেওয়া যায় এমন শিশুর সংখ্যাই বেশি।

শিশুর এমন জেদের কারণ

একরোখা ভাব বা যে কোনো কিছু নিয়ে জেদ করা অনেক শিশুরই বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য। জেদকে মূলত শিশুর রাগ আর হতাশার শরীরী প্রকাশই বলা চলে। কোনো কিছু নষ্ট করা, অতিরিক্ত কান্না, মারধর করা ইত্যাদি জেদের বহিঃপ্রকাশ। শিশুর এ জেদকে বিশেষ ভাষায় টেম্পার ট্যানট্রাম বলে। দুই থেকে চার বছরের শিশুদের মধ্যে এটি বেশি লক্ষ করা যায়। এ শিশুরা একটানা দীর্ঘক্ষণ চিৎকার করে, মেঝেতে হাত-পা ছুড়ে কান্না করে। এদের মধ্যে কারো সঙ্গে নিজের কিছু শেয়ার না করা, একই বয়সী অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করার প্রবণতা দেখা যায়।

আমাদের মস্তিষ্কের একেকটি অংশ একেকটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। তেমনি প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স আমাদের আবেগ অনুভূতির প্রকাশ ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্কের এ অংশের পরিপূর্ণতার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে পরিপক্বতা আসতে শুরু করে।

অতিরিক্ত রাগ প্রকাশের কারণ

- শিশুর রাগের একটি কারণ হলো, তার অনুভূতি অন্যকে যথাযথভাবে বোঝাতে না পারা।

- নিজের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও শিশু জেদ করে থাকে।

- অনেক সময় ক্ষুধা বা ক্লান্তি শিশুর মেজাজ খিটখিটে করে দেয়। অনেক মা-ই বলে থাকেন ঘুমের আগে শিশুরা বেশি জেদ করে।

- কাজে একঘেয়েমি বা অসফলতা শিশুর জেদের আরো একটি কারণ।  

শিশুর জেদ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই বড়দের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে নানা ধরনের কাজের মাধ্যমে। শিশুদের যে কাজে বা আচরণে মা-বাবাসহ অন্যরা বেশি মনোযোগ দেন, সেসব আচরণই সে বারবার করে। এই মনোযোগ যেমন আমরা আদর বা প্রশংসা করা, দাবি পূরণ করার মাধ্যমে দিতে পারি, তেমনি ‘বকা দেওয়া’, ‘বোঝানো’র মাধ্যমেও হতে পারে। যেমন, কোনো শিশু কোনো কিছু কেনার জন্য জেদ ধরলে তাকে সেটা কিনে দিলে তার জেদের প্রবণতা আরও বাড়বে। কেননা সে বুঝে যায় কোনো কিছু আদায় করতে হলে এমন আচরণ করলেই তার চাহিদা পূরণ হবে।

যে শিশুটি কোলে ওঠার জন্য মাটিতে গড়াগড়ি দেয়, তাকে সে সময় কোলে তুলে নেওয়া হলে তার অনাকাঙ্ক্ষিত এই আচরণটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে সে উৎসাহিত হয়ে পরে এ আচরণটিই বার বার করে। শিশুর কোনো আচরণে মনোযোগ দিলে যেমন সে আচরণের প্রতি তার প্রবণতা বেড়ে যায়, তেমনি শিশুর কিছু কর্মকাণ্ডকে আমলে না নিয়ে উপেক্ষা করলে সে কাজগুলো করার প্রবণতা আপনিতেই কমে যায়। 

শিশুর জেদ নিয়ন্ত্রণের উপায়

- শিশুর জেদ ও অবাঞ্ছিত আচরণগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করুন। শিশুর জেদের সময় তাকে আদর করা, বোঝানো এবং তার চাহিদা পূরণ না করাই ভালো। তার আচরণগুলো সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলে শিশু বুঝবে জেদ করে সে কোনো কিছু আদায় করতে পারছে না। ধীরে ধীরে সে ওই আচরণ থেকে বেরিয়ে আসবে।

- জেদের সময় শিশুকে বকা দেওয়া, মারধর করা বা শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়। এতে করে তার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।  

- আপনার সন্তানটিকে সব কাজে বাধা না দিয়ে যে কাজগুলো তার জন্য ক্ষতিকর নয়- এমন কিছু কাজ নিজের মতো করতে দিন।

- রাগান্বিত অবস্থায় শিশুকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা না করে সে শান্ত হলে তার এমন আচরণের কারণ জানতে চান এবং এমন করা যে ঠিক নয় তা বুঝিয়ে বলুন।

- সন্তানের রাগ কমাতে নিজেও রেগে যাবেন না। বাসার অন্যদের সঙ্গে আচরণেও এ বিষয়টি মাথায় রাখুন, যাতে আপনার আচরণ শিশুকে প্রভাবিত না করে।

- শিশুর কোনো নেতিবাচক আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সে কাউকে আঘাত করলে তা যে উচিত হয়নি তা তাকে বুঝিয়ে দিন।

- তার চাহিদা পূরণ করুন এমনভাবে, যাতে সে বুঝতে না পারে আবদার করেছিল বলেই তাকে এটি দেওয়া হলো। তাই চাওয়া মাত্রই না দিয়ে একদিন পর বা অন্য কোনো সময় দিন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads