• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মহানগর

শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততা বই পাড়ায়

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০১৮

একুশে গ্রন্থমেলা সামনে রেখে বই পাড়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়। অধিকাংশ প্রকাশনীতে রাতদিন কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ধারাবাহিকভাবে চলছে প্রুফ রিডিং, প্রিন্টিং, বাঁধাই। সঙ্গত কারণে ব্যস্ত সময় কাটছে ছাপাখানার শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর বাংলাবাজার ঘুরে জানা গেল, বেশিরভাগ প্রকাশনীর বই ছাপানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে এখনো বাঁধাই বাকি রয়েছে বইয়ের বড় অংশের। রাত-দিন বাঁধাইয়ের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা।
প্রকাশকরা জানালেন, তাদের বইমেলার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে অক্টোবর থেকেই। বইয়ের প্রচ্ছদ ও প্রুফ রিডিংয়ের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হয়। এই ব্যস্ততা চলবে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই, বইমেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
অনিন্দ্য প্রকাশের ম্যানেজার সমীর বিশ্বাস বলেন, সারাবছরই আমাদের ব্যস্ততা থাকে। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে থাকে মহা ব্যস্ততা। অক্টোবর থেকে পুরোদমে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। এবার ৬৫ থেকে ৭০ টা নতুন বই প্রকাশ হবে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে বই আসা শুরু হয়েছে। এখন প্রচ্ছদ ডিজাইন ও প্রুফ দেখার কাজ চলছে। এই প্রক্রিয়া চলবে বইমেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত।
নিজস্ব প্রিন্টিং মেশিন রয়েছে যেসব প্রকাশনীর, তাদের কাজ কিছুটা সহজ হয় বলে জানালেন সাহস পাবলিকেশন্স এর কর্ণধর নাজমুল হুদা রতন। তিনি বলেন, সাধারণত একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষেই দেশের সিংহভাগ বই প্রকাশিত হয়ে থাকে। যে কারণে এই চাপটা এসে পড়ে। তবে যেসব প্রকাশনীর নিজস্ব ছাপাখানা রয়েছে, তাদের কাজ কিছুটা সহজ হয়।
সাহস পাবলিকেশন্স থেকে নতুন প্রায় ৩০টি বই এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ হবে বলে নাজমুল হুদা রতন। এর মধ্যে ১৫টি বইয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ। বাকিগুলোর কাজ চলছে। মেলার শেষদিন পর্যন্ত বইয়ের কাজ চলবে বলে জানালেন তিনি।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর ম্যানেজার সমর কুমার জানান, তাদেরও কাজ শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। এমনিতে সারাবছর নানা কাজ থাকে। তবে বইমেলার কাজ শুরু হয়েছে অক্টোবরে। এবার বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক ৫০টা বই আসবে তাম্রলিপি থেকে। এই বই ঘিরে তাদের অনেক প্রত্যাশা বলে জানালেন সমর কুমার।
দিব্য প্রকাশনীর কামাল হাসান জানালেন, বেশ কিছু বই প্রস্তুত হয়ে গেছে। আরও ১৫-২০টা বই জানুয়ারির মধ্যে চলে আসবে। প্রস্তুত হওয়া বইয়ের মধ্যে আছে শ্রী রমেশচন্দ্র মজুমদারের দুই খ-ে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’। সালিম অর্ণবের বাগদাদ বিনাশী ‘হালাকু খান’। বাকি বই প্রেসে আছে। বাঁধাইয়ের কাজ চলছে।
দিব্য প্রকাশ থেকে ইতিহাসধর্মী বই বেশি প্রকাশ হয় বলে সারা বছরই বইগুলো চলে। ফলে শুধু বইমেলা নয়, তাদের ব্যস্ততা থাকে সারা বছর। তবে বইমেলায় চাপ বেশি বলেও জানান কামাল হাসান।
বইমেলার এই চাপ সামলাতে ব্যস্ত কালো’র প্রকাশক শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ। তিনি জানালেন, চাপটা প্রকাশকেরা উপভোগই করেন। কারণ, দেশের বই বিক্রির এ বৃহত্তম মেলার সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্যও জড়িত। যতো চাপ, ততো বাণিজ্যের সম্ভাবনা। তবে চাপটা শেষ দিকে এসে বেশি পড়ে। এর জন্য লেখকরাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়ী বলে তিনি মনে করেন।
মোশাহিদ বলেন, অধিকাংশ লেখকই মনে করেন মেলার এক সপ্তাহ আগে পা-ুলিপি জমা দিলেই হয়ে যাবে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। একটা ভালো প্রোডাকশনের জন্য সময়ের দরকার। শুধু প্রিন্ট করলেই তো বই হয়ে যায় না। প্রুফ দেখার কাজ রয়েছে। বাঁধাই রয়েছে। আর এসবের জন্য প্রিন্টিং মেশিন কিংবা বাঁধাই শ্রমিকও নির্দিষ্ট। এমন না যে বইমেলা আসলে দেশের ছাপাখানা বেড়ে যায়। কিংবা শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যায়। সুতরাং চাপটা শেষ সময়ে এসে পড়ে।
অন্যদিকে প্রকাশকেরাও সময় ও প্রোডাকশন খরচ বাঁচাতে অনেকগুলো বইয়ের কাজ এক সঙ্গে করতে চান। শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ জানালেন, এ কারণেও শেষ মুহুর্তে কাজের চাপ বেড়ে যায়।
কালো থেকে এবার বইমেলায় নতুন প্রায় ৩০টি বই প্রকাশ পাচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেক বইয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
মেলার বাইরেও সারাবছর বিভিন্ন জেলায় বইমেলা চলে। ফলে জেলাভিত্তিক বইমেলায় বইয়ের চাহিদা থাকে। এছাড়া ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে সারা বছরই পাঠক বই কিনে থাকেন বলে জানান একাধিক প্রকাশক।
প্রিন্টিং প্রেসে গিয়েও দেখা গেল ব্যস্ততা। পেঙ্গুইন প্রিন্টিং প্রেসের ফারুক হোসেন জানালেন, এখন গড়ে বারো-চৌদ্দ ঘণ্টা করে কাজ করতে হচ্ছে। মেলার কয়েকদিন আগ থেকে এমন হয়, চব্বিশ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। ছুটি মেলে না। প্রতিবছর একই চিত্র দেখতে হয় বলে তিনি জানান।
শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততায় কাটাচ্ছেন প্রচ্ছদ শিল্পীরাও। দেশের পুস্তক শিল্পে প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে খ্যাতনামা ধ্রুব এষ জানালেন, প্রচ- ব্যস্তায় কাটছে তার সময়। শেষ সময়ে এসে দম ফেলবার ফুসরত নেই।
তিনি বলেন, এমনই হয়। এমনিতে সারা বছরই কাজ থাকে। তবে বইমেলা শুরুর সময়টায় প্রকাশকদের তাড়ার ওপর তাকতে হয়। এটা স্বাভাবিক। প্রকাশকেরাও চান সময়মতো তাদের বই মেলায় আনতে।
তিনি জানান, এখনো সংখ্যাটা সঠিক বলতে না পারলেও এবারের গ্রন্থমেলায় হাজারেরও বেশি বইয়ের জন্য প্রচ্ছদ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ব্যস্ত সময় কাটছে দেশের অন্যান্য প্রচ্ছদ শিল্পীরও। মামুন, তানভীর এনায়েত, তুলি, শাকের এহসানুল্লাহ প্রত্যেকেই বইয়ের প্রচ্ছদে শেষ সময়ের আঁচড় দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads