• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মহানগর

প্রতারণার শিকার চিত্রশিল্পীঃ ৫ নাইজেরিয়ান আটক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিদেশ থেকে পুরস্কারের কথা বলে এক চিত্রশিল্পীর কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রকে আটক করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম।

বনানী থানায় ওই চিত্রশিল্পীর করা মামলার দায়িত্ব নিয়ে সিআইডি গেল শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বসুন্ধরা ও খিলক্ষেত লেক সিটি এলাকা হতে প্রতারণায় জড়িত ২ বাংলাদেশীসহ ৫ নাইজেরিয়ানকে আটক করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন বাংলাদেশী নাগরিক মো. কাউসার আহমেদ (একাউন্ট হোল্ডার), রাইসুল ইসলাম আসাদ (একাউন্ট সংগ্রহকারী) ও নাইজেরিয়ান নাগরিক ওগোখোয়া ওনোচি (৩২), মরিস (৩৪), ওবিনা (৩৫), হ্যানরি ওরফে শর্ট হ্যানরি (২৪) এবং এন্থনি কেজিতো অ্যারেঞ্জি (২৬)।

সিআইডির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নাদিরা আক্তার পেশায় একজন চিএশিল্পী। ইংল্যান্ডের এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় তিনি তার কিছু ছবি পাঠান। এই তথ্যটি প্রতারকরা সংগ্রহ করে। এর পরে তাকে একজন ফোন দিয়ে নিজেকে ইংল্যান্ডের ওই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার একজন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলে আমি ইংল্যান্ড থেকে বলছি তুমি ইংল্যান্ডে প্রতিযোগিতার জন্য যে ছবি পাঠিয়েছ সেটা পুরস্কার পেয়েছে। তোমার পুরস্কার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে শামীমা রহমান নামে আরেকজন নাদিয়া আক্তারকে ফোন দিয়ে বলেন, আমি চট্রগ্রাম বন্দর হতে বলছি, আপনার নামে ১টি পার্সেল এসেছে, যাতে তিন লক্ষ অনেক পাউন্ড আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ পর্সেলটি স্ক্যান করে পাউন্ড দেখে আটকে দিয়েছে। পার্সেলটি ছাড়িয়ে নিতে অনেক টাকা লাগবে।

এরপর থমাস কিং নামক আরেকজন নাদিরা আক্তারকে ফোন করে জানায় সে তার নামে যে পার্সেল পাঠিয়েছে তা চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আটকে দিয়েছে এবং মামলা হয়েছে। পার্সেলটিতে তিন লাখ পাউন্ডসহ আরো মূল্যবান উপহার আছে বলে তাকে পার্সেলটি যে কোনভাবে ছাড়িয়ে আনতে বলেন। প্রয়োজনে টাকা খরচ করতে বলেন।

দফায় দফায় থমাস কিং এবং শামীমা রহমান তাকে ফোন দিয়ে পার্সেলটি ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য টাকা দিতে বলতে থাকেন। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় তিন কোটি টাকা ও বিভিন্ন দামি উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা খরচ করার জন্য তাকে সম্মত করে ফেলেন। তাদের কথা বিশ্বাস করে পার্সেলটি ডেলিভারি নেওয়ার জন্য তাদের দেয়া ব্যাংক হিসাব নম্বরে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান।

টাকা পাঠানোর পর তার আরো টাকা লাগবে বলে জানায়। তিনি তাদের কথা মতো আরেকটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে ২ লাখ টাকা পাঠান। তারপরেও পার্সেলটি তিনি হাতে না পেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে জানায় তিন কোটি টাকার পার্সেল নেয়ার জন্য এত অল্প টাকায় ছাড়িয়ে নেয়া যাবে না, আরো টাকা লাগবে। তারা পার্সেলটি ছাড়িয়ে নিলে অবৈধ উপায়ে পার্সেলটি আনার বিষয়ে মামলাতে ফেঁসে যেতে পারেন বলে ভয় ভীতি দেখিয়ে দ্রুত টাকা দিতে বলেন।

নাদিরা আক্তার মামলার ভয়ে এবং কোটি টাকার পুরস্কারের প্রলোভনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সর্বোমোট ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪শ টাকা প্রদান করেন।

তারপরেও পার্সেলের কোনো খোঁজ না পায়ে থমাস কিং এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পার্সেল দিতে পারবে না বলে জানায়। বলে অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে পার্সেলটি আর দেয়া যাবে না এবং তার সাথে যোগাযোগ করতে মানা করে দেয় এবং যোগাযোগ করলে পরিনাম খারাপ হবে বলে হুমকি প্রদান করে।

পরবর্তিতে থমাস কিং এর সাথে যোগাযোগ করলে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলে নাদিরা আক্তার বুঝতে পারেন তিনি বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং উপায় অন্ত না পেয়ে বনানী থানায় একটি মামলা রুজু করেন।’

সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতারক চক্রটি প্রথমে অবস্থা সম্পন্ন একজনকে টার্গেট করে। এর পর টার্গেটের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে। এরপর নাইজেরিয়ানরা নিজেদেরকে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান বলে পারিচয় দেয় এবং ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান নাগরিকদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক একাউন্ট খুলে ভিকটিমের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করে বিশ্বস্ততা অর্জন করে বিভিন্ন উপায়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।

আর বাংলাদেশী সহযোগীদের কাজ ব্যাংক হিসাব নম্বর সংগ্রহ করা যার মাধ্যমে ভিকটিম টাকা প্রদান করে। এই সহযোগিতার বিনিময়ে যার নামে ব্যাংক একাউন্ট এবং যে নাইজেরিয়ানদের কাছে একাউন্ট নম্বরটি ও টাকা পৌঁছে দেয় তারা প্রতিটি এক্যাউন্টে যত টাকা ঢুকে তার ৫ শতাংশ পেয়ে থাকে। এভাবে সুকৌশলে প্রতারক চক্রটি বহুদিন ধরে প্রতারণা করে চলছিল।

জানা গেছে, নাইজেরীয় এই নাগরিকরা বিভিন্ন ক্লাবে ফুটবল খেলার নাম করে বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন অপরাধ কর্মে লিপ্ত হচ্ছেন।

চক্রটির মূল উৎপাটনে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইমের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads