• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শাহাদাত ফাহিম

প্রতীকী ছবি

হাস্যরস

আমাদের হেলমেটীয় জীবন

  • শাহাদাত ফাহিম
  • প্রকাশিত ০৬ অক্টোবর ২০১৮

এক মার্কেট দুই মার্কেট করে বহু মার্কেট ঘুরলেন খরখরা ম্যাডাম। এভাবে শহরের সবকটি মার্কেট ঘোরা শেষ। প্রত্যেক মার্কেট থেকে বেরোনোর সময় তার বদনে হালকা হতাশার ছাপ ডেকচিতে পানি ফোটার মতোই ফুটে ওঠে। বাধ্য হয়ে আবার নতুন উদ্যমে প্রথম মার্কেট থেকে ঘোরাঘুরি শুরু করেন। এভাবে কয়েক দিনে কয়েক রাউন্ড পার হয়েছে। আজো প্রথম মার্কেটের প্রথম দোকানে প্রবেশ করে আগের মতোই হেলমেট পছন্দ করার কসরত শুরু করলেন। একপর্যায়ে দোকানি বললেন- ম্যাডাম, আপনি তো মনে হয় হেলমেট খোঁজার জন্যই আরো কবার এসেছিলেন। কিন্তু আপনি তো হেলমেট কিনছেন না। জিজ্ঞেস করলেও বলছেন না যে, আপনি কেমন হেলমেট চাচ্ছেন। শুনে হতাশ বদনে খরখরা ম্যাডাম আঙুলের নখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলেন- আসলে আমি আমার নেইলপলিশের সঙ্গে ম্যাচিং করে হেলমেট খুঁজছি। কিন্তু কোথাও পুরোপুরি মেলাতে পারছি না! আপনি আমাকে হেল্প করেন প্লিজ...

নেইলপলিশের সঙ্গে ম্যাচিং করে হেলমেট খোঁজা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়। দোষের যা, তা হচ্ছে যেখানের জন্য হেলমেট জরুরি সেখানে ব্যবহার না করা। অবশ্য উত্তর আধুনিক সময়ে হেলমেটের ব্যবহার হতে পারে নানাবিধ। দেশে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি হলেও কাকের জ্বালা-যন্ত্রণার মাত্রা কিন্তু কম নয়। যেখানে-সেখানে, যখন-তখন এরা ইনসানকুলের মস্তক বরাবর হাগু করে দিতে বড়ই পারঙ্গম। নিজের তেলে, নিজের চিরুনিতে আঁচড়ানো নিজের মস্তক কাউয়ার হাগু থেকে রক্ষা করতে হলে এই হেলমেটের উপকারিতা অনস্বীকার্য। পাওনাদারের তির্যক চোখের দৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে এই হেলমেটের আশ্রয় নিশ্চিতভাবে ফায়দা দেবে। শহরে নির্মাণাধীন ভবনের যেমন হিসাব নেই, তেমনি উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণেরও কোনো ইস্তফা নেই। এগুলোর পাশ দিয়ে বা নিচ দিয়ে হেঁটে গেলে দু-এক পিস ভারী বস্তু যে শ্যাম্পো করা চুলো মাথায় পতিত হবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটি হেলমেটই যথেষ্ট। মাঠে গিয়ে খেলা দেখার খায়েশ কার না আছে! কিন্তু এ সময় যে একটি বল এসে মাথায় আঘাত করে বসবে না, তার কি গ্যারান্টি আছে? কোনোই গ্যারান্টি নেই। তাই এ সময় মাথায় একটি হেলমেট রাখলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খেলা দেখতে পারবেন যে কেউ। ডেটিংয়ের সময় মাইয়া পোলা উভয়ে মাথায় হেলমেট রাখলে পাক্কা  নিরাপদ। একদম বাসার সানসেটে বসে ডেটিং করলেও কারো চেনার উপায় থাকবে না। হেলমেট আইন মানলে সবার রুচি সমানভাবে কাজ না করলেও শহরে যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট মোটরসাইকেলে এখন শোভা পাচ্ছে ডাবল হেলমেট। অবশ্য এতে নারীযাত্রীর আপত্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ এক হেলমেটই নাকি তাদের তামাম আশা-ভরসা ধ্বংস করে দেয় মুহূর্তে। তার কারণ হচ্ছে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী করা মেকআপ হেলমেট পরলে ঢাকা পড়ে যায় কয়েক সেকেন্ডেই। এতে যে তাদের জীবন সেফটি হচ্ছে, সেকথা তারা নাকি কানে তুলতেও রাজি নেই। তারা জোর দিয়ে ঘন ঘন মুখে তুলছেন- জীবন সেফটির চেয়ে পরিশ্রমের মেকআপ করা বদন প্রদর্শন কোনো অংশেই কম নয়।

শিশুরা স্কুলে গিয়ে পরস্পরে হালকা পাতলা ধরনের মারামারি করে থাকে। তাই স্কুলে যাওয়ার প্রাক্কালে তাদের মাথায় একটি করে হেলমেট পরিয়ে দিলে মন্দ হয় না। মুরব্বিরা কখন কোথায় পিছলা খেয়ে পতিত হয়ে মাথার ক্ষতি করে ফেলেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তাই তাদের মাথায়ও হেলমেট রাখা দরকার। বিশ্বস্ত গুজব রয়েছে যে, বাসার বাইরে নারীরা আজকাল একদমই নিরাপত্তাহারা। তাই নিরাপত্তার প্রয়োজনে বাসা থেকে শুধু ঢং করার জন্য বের হলেও নারীদের মাথায় একটি হেলমেট পরে নেওয়া চাই। এতে ঢঙের ব্যাঘাত ঘটলেও ঘটুক। নিরাপত্তাটাই আসল। এদিকে ডাবল বিশ্বস্ত গুজব রয়েছে যে, বাসার ভেতরে নাকি নারীদের চেয়ে বেশি নিরাপত্তাহারা অবলা পুরুষরা। তাই পুরুষের নিরাপত্তার স্বার্থে বাসায় প্রবেশের আগে হেলমেট পরে নেওয়া অতীব জরুরি। এতে নির্দয় সন্ত্রাসী স্ত্রীর হকিস্টিক বা চাপাতির আঘাত থেকে পুরুষরা নিজেদের মস্তক রক্ষা করতে পারবে আস্থার সঙ্গে। অবস্থা ভেদে হেলমেটের প্রকার একাধিক থাকতেই পারে। কথিত আছে, দুর্ঘটনার সময় হেলমেট না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে যেমন জীবন চলে যেতে পারে, তেমনি হেলমেট থাকলে দুর্ঘটনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনের সৃষ্টিও হতে পারে!

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads