• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মশা মারার কেতাবি কায়দা

মশা দেখলেই অনেকের জজবা তৈরি হয়ে যায়

সংগৃহীত ছবি

হাস্যরস

মশা মারার কেতাবি কায়দা

  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৮

শাহাদাত ফাহিম

ছোট্ট থেকে বড্ড। আধপাগল থেকে ফুলপাগল। লেডিস থেকে হাফ লেডিস- জীবনে মশা মারেনি জগতে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভালো কথা। খুঁজে না পাওয়া যাওয়াটাই ভালো। কারণ শুধু বাসররাতে বেড়াল মারার মধ্যেই তামাম সফলতা নয়। মশা মারতে পারাও জীবনের জন্য বিরাট ধরনের সফলতা। আর এদিক থেকে বলা যায়, জগতের সব ইনসানই সফল। তবে এই মশা মারারও রয়েছে সহি কায়দাকানুন। কায়দাকানুন রপ্ত করা ছাড়া মশা মারলে তাকে সফল বলা যাবে কি না- সেটি অবশ্য মধ্যরাতের বিশেষ গুরুত্ববাহী টিভি টকশোর আলোচনার বিষয়। মধ্যরাতের আলোচনা এখন মধ্যদিনে করে বসব- এতটা অনৈতিক কাজ আমরা করতে রাজি নই। 

মশা দেখলেই অনেকের জজবা তৈরি হয়ে যায়। মুহূর্তেই ঠুশ করে মেরে বসেন। এটি একদমই ঠিক নয়। মারার আগে মশা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। জানতে হবে মশার ইতিবৃত্তান্ত। ভালো-মন্দ। বংশ পরিচয়। যোগ্যতা-প্রতিভা। লিঙ্গপরিচয় এবং বৈবাহিক অবস্থা। তার পরই অবস্থার ওপর ভিত্তি করে মারা না মারার বিষয়টি বিবেচিত হবে। জাত বংশের দিক থেকে উন্নত মশারা সাধারণত নিম্নবিত্ত ইনসানের শরীরে বসে না। তারা বড়লোক বা ধনীদের গতরে বসতে পছন্দ করে। তবে বংশহীন মশারা নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকদের শরীরে বসার কথা থাকলেও তারা কিন্তু বসে না। তারা বেছে বেছে দুর্নীতিবাজ উচ্চপদস্থ হোমড়াচোমড়াদের শরীরে বসে। মুরব্বি ক্যাটাগরির মশারা ভিন্ন মতাদর্শের। তারা বৃদ্ধদের শরীরে বসতে নারাজ। তাদের পছন্দ ছোটদের রক্ত। তাই ছোটদের শরীরেই তারা বসে। তরুণ মশারা উপোস থেকে ক্ষুধার জ্বালায় মারা যেতে প্রস্তুত। তবু তারা পুরুষের শরীরে বসে না। তারা শুধু বেছে বেছে তরুণীদের গতরে বসে। তারা মরলে এখানেই মরবে। বাঁচলে এখানেই বাঁচবে। যুবক মশারা নিয়ম অনুযায়ী মধ্যবয়সীদের শরীরে বসার কথা থাকলেও তারা সব বয়সীদের শরীরেই বসে। সবার রক্তই তাদের পছন্দ।

দলগতভাবে মশারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত থাকতে দেখা যায়। তবে তারা কিন্তু মৌলিকভাবে একই বংশের প্রাণী। তাদের বংশের নাম পাদানিসা। অর্থাৎ মশারা পাদানিসা বংশের প্রাণী। এই কারণে জন্মগতভাবেই তারা বিরাট সিঙ্গার। একমাত্র তারাই বিনা পারিশ্রমিকে গান শুনিয়ে থাকে। এটি অবশ্য তাদের বংশীয় ঐতিহ্য। এই ধারা তারা আজ পর্যন্ত বজায় রেখেছে। তবে তাদের গান এক অজানা কারণে ইনসানকুল সহ্য করতে পারে না। তাদের গান শুনলে ইনসানের মেজাজ আউলা-ঝাউলা হতে বাধ্য। তাই শুধু গান শোনানোর জন্য শরীরে বসলেও ইনসান তাদের হত্যা করার বেলায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। ঠাশ করে থাপ্পড় চালিয়ে দেয়। তবে এই থাপ্পড়ের রয়েছে কেতাবি কায়দা।

উরুতে বসলে হালকাভাবে থাপ্পড় মারা নিয়ম। কিন্তু গালে বসলে হালকা থাপ্পড় মারাটি আইনের খেলাফ। এক্ষেত্রে কষে চটকনা মেরে মশা মারতে হবে। পিঠে মশা বসলে নিজের হাত সেখানে পৌঁছাতে না পারার কারণে পাশের জনের সাহায্য নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। এটি সম্পূর্ণ ভুল কায়দা। এক্ষেত্রে শুদ্ধ তরিকা হলো- ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া। যা করার ফায়ার ফোর্স এসেই করবে। কপালে মশা বসলে হাতের তালু দিয়ে আঘাত করে অনেকেই নিজের অমঙ্গল ডেকে আনেন। অথচ সহজ সমাধান হচ্ছে কাছের কোনো দেয়ালে জোরেশোরে কপাল দিয়ে আঘাত করে বসা। বেশরম মশারা মানুষের নিতম্বে বসতেও দ্বিধা করে না। মনে রাখতে হবে, এ সময় কিছুতেই নিজে আঘাত করবে না। সহি কায়দা হচ্ছে মোবাইল করে দূর থেকে কাউকে ডেকে এনে তাকে দিয়ে আঘাত করা। তবে আরো মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, যাকে দিয়ে আঘাত করা হবে তিনি কিন্তু হাত দ্বারা আঘাত করতে পারবেন না। তিনি হালকা দাঁত-মুখ খিঁচে মশাকে টার্গেট করে লাথি মারবেন। নাকে বসা মশাকে মারার জন্য বটি ইউজের অনুমতি আছে। তবে বটিখানা অবশ্যই ধারালো হওয়া শর্ত।

প্রেমিকার গায়ে হুল ফোটানো মশা মারার সহি রীতিও প্রণীত রয়েছে। এই মশাকে প্রেমিকের বংশের কারো সাহয্যে মারতে হবে। আবার প্রেমিকের গায়ে হুল ফোটানোর জন্য বসা মশাকে মারতে হলে অবশ্যই প্রেমিকার বড় ভাই টাইপের কারো সহযোগিতা নেওয়া চাই। স্ত্রীর গায়ে মশা বসলে সরাসরি স্বামীর আঘাতে মারতে হবে। এক্ষেত্রে স্বামী খালি হাত ব্যবহার করা বেআইনি। ব্যবহার করতে হবে ফোম জাতীয় নরম কোমল যেকোনো বস্তু। স্বামীর গায়ে বসা মশা মারতে হবে নিজের স্ত্রীকে। তবে এই ধারার সহি অনুচ্ছেদ হলো- আঘাত করার জন্য স্ত্রীকে ঝাড়ু, বেলুন অথবা ক্ষুন্তি- এই তিনটির যেকোনো একটি ব্যবহার করতে হবে। মশার কামড় খেয়ে অনেকে উহ্, আহ্ শব্দ করে থাকেন। আইনের চোখে এটি শুধু বেআইনিই নয়; মারত্মক দণ্ডনীয় অপরাধও বটে! এই অপরাধে বিনা ওয়ারেন্টে যেকোনো সময় যে কেউ গ্রেফতার হতে পারে। শুদ্ধ নিয়ম হচ্ছে মশা কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে প্রেমের গান গাইতে শুরু করতে হবে। এবার চাই গলায় সুর থাকুক বা না-থাকুক।

মশারির ভেতর মশা মরার উদ্দেশ্যে অনেকে হাততালি বাজিয়ে থাকেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল তরিকা। এতে মশারা হাত তালির আনন্দে দ্বিগুণ উৎসাহ বোধ করে। ফলে আগের চেয়ে তিনগুণ উদ্যমে তারা কামড়িয়ে থাকে। এখানে সহি পদ্ধতি হচ্ছে- শোয়ার সময় হাতের কাছে একখানা পিস্তল রাখতে হবে। তারপর দেখে দেখে প্রতিটি মশাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে খুন করতে হবে। গুলি করতে করতে টোটা শেষ হয়ে গেলে মশাকে পিস্তলের বাঁট দিয়ে বাড়ি মেরে খুন করতে হবে। পড়তে বসলে শরীরে হুল ফোটালে মশাকে কিছুই করা যাবে না। শুধু হালকাভাবে বই বন্ধ করে ঘুরতে চলে যেতে হবে। টয়লেটে বসলে অনেক সময় মশা ডিস্টার্ব করে। এই সময় মশাকে মারার অনেকগুলো সহজ তরিকা রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে সহজ তরিকা হচ্ছে- কামান দাগিয়ে মারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads