• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের ও রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক-পণ্য

ছবি : সংগৃহীত

পণ্যবাজার

কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি

কমেছে প্লাস্টিক-পণ্য রফতানি

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০১৮

বিশ্ববাজারে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের রফতানিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশ থেকে প্লাস্টিকের পণ্য রফতানিতে আয় বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশের প্লাস্টিক রফতানিতে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার, যা এ অর্থবছরে ৭ কোটি ৩৫ লাখে নেমেছে।  

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন প্লাস্টিক খাতের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা বাতিল ও বন্দরে কন্টেইনার জটের কারণেও ভুগছে এ খাত। সবমিলে রফতানি নেমেছে আশঙ্কাজনক হারে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে দেশ থেকে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও হয়েছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে রফতানি কমেছে ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) পরিচালক ও ওয়ান্ডার প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক ইউসুফ আশরাফ বলেন, কয়েক মাস আগে প্রতি টন কাঁচামাল কেনা যেত মানভেদে ৯০০ ডলার থেকে ১ হাজার ৫০ ডলারের মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে তা ১ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এত দাম দিয়ে পণ্য তৈরির কাঁচামাল কিনে রফতানি করে পোষাচ্ছে না।

তিনি বলেন, জিএসপি বাতিলের কারণে দীর্ঘমেয়াদে প্লাস্টিক খাতকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর বন্দরে কন্টেইনার জটের কারণে সময়মতো কাঁচামাল আমদানি আবার পণ্য রফতানি সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণেও প্লাস্টিকের পণ্য উৎপাদনের খরচ বাড়ছে বলছেন মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলছেন, এর প্রভাব পড়ছে রফতানি আয়ে।

দেশে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক-পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের প্লাস্টিক-পণ্য। তবে দেশে প্লাস্টিক খাতের কাঁচামাল মূলত আমদানি-নির্ভর। কিছু পণ্য রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হলেও সেসব পণ্য রফতানিযোগ্য নয়। তাই এই খাতকে এগিয়ে নিতে কাঁচামালের আমদানি-নির্ভরতা কমানোর তাগিদ ব্যবসায়ীদের।

বিপিজিএমইএ’র তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পাঁচ হাজারের বেশি প্লাস্টিক-পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার ছোট, মাঝারি দেড় হাজার ও বড় মাপের ৫২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শতভাগ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০০টি প্রচ্ছন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান, ২০টি সরাসরি প্লাস্টিক-পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও উভয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০টি। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ২০ লাখ মানুষ জড়িত।

ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ২৩টি দেশে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হয়। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক-পণ্য রফতানি হয়। এসবের বাইরে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে প্লাস্টিক-পণ্য যাচ্ছে।

ইপিবি বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছর (২০১৬-১৭) ১১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলারের প্লাস্টিক-পণ্য রফতানি করা হয়েছে। আর পাঁচ বছরে (২০১২ থেকে ১৭) মোট রফতানি আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

আর ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্লাস্টিক খাত থেকে রফতানি আয় ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে প্লাস্টিক শিল্পনগরী তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ প্লাস্টিক শিল্পকে অগ্রাধিকার খাতের শীর্ষে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads