• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মার্কেটগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

রাজধানীর মার্কেটগুলোতে গতকাল ঈদের কেনাকাটায় ছিল প্রচণ্ড ভিড়। ছবিটি নিউমার্কেট এলাকার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

পণ্যবাজার

মার্কেটগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০১৮

শেষ মুহূর্তে এসে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় গতকাল শুক্রবার অনেকেই সেরে নিয়েছেন ঈদের কেনাকাটা। অপরদিকে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার একাংশ রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন। এ কারণে এদিন রাজধানীজুড়েই ছিল তীব্র যানজট।

সকাল ১০টা থেকেই রাজধানীর মার্কেটগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের সমাগম। নিউমার্কেট, চাঁদনীচক মার্কেটে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। একই অবস্থা ছিল এলিফ্যান্ট রোডের অন্যান্য বিপণিবিতানগুলোতেও। নীলক্ষেত থেকে আসাদগেট পর্যন্ত মিরপুর রোডের দুই পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কেট। ধানমন্ডি এলাকার শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, ২৭ নম্বর রোড, আসাদগেট এলাকার মার্কেটগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেশি থাকায় পুরোটা দিনই এই সড়কে ছিল তীব্র যানজট। যার প্রভাব ছিল আসাদগেট থেকে শ্যামলী পর্যন্ত। এ ছাড়া ছিল গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালগামী যাত্রীদের ভিড়। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনগামী যাত্রীদের ভিড়ও ছিল উল্লেখ করার মতো।

এদিন আসাদগেট থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত পৌঁছাতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। একই চিত্র ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, পান্থপথ মোড় থেকে কাওরানবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে। বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটায় শুক্রবার ছিল সর্বোচ্চ ক্রেতা সমাগম। তীব্র যানজট লক্ষ করা যায় গুলিস্তান, পল্টন, মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ এলাকায়। অন্যদিকে নাইটএঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়ক, বেইলি রোড, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক ও মগবাজার সড়কেও ছিল যানজট।

তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের। ঈদ উপলক্ষে ও বিশেষ সেবা প্রদানে শুক্রবারও অফিস করেছেন বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মরতরা। কায়েস বিন হুসাইন আছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ পদে। তিনি জানান, মিরপুর-১১ নম্বর থেকে গুলশান-২ নম্বরের অফিসে পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। বনানীর কাকলী মোড় থেকে গুলশান-২ নম্বর পর্যন্ত যানবহন চলেছে থেমে থেমে। তিনি বলেন, এই সামান্য রাস্তা হেঁটে গেলে লাগে ৭ থেকে ১০ মিনিট। সেখানে মোটরবাইকে লেগেছে দেড় ঘণ্টা।

ঈদের কেনাকাটা করতে মোহাম্মদপুর বাসা থেকে নিউমার্কেটের উদ্দেশে রওনা হন একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের ব্রডকাস্ট প্রকৌশলী মেরাজ হোসেন। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাইফেল স্কয়ারের সামনে থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত আসতে যানজটের কারণে গাড়িগুলো স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন। পরে বাস থেকে নেমে হেঁটেই বাকি পথ পের হন তিনি।

কথা হয় এলিফ্যান্ট রোডের জুতার মার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে। জুতা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জুতার কেনাকাটা হয় রোজার শেষ ১০ দিন। বৃহস্পতিবার পর্যন্তও তেমন ক্রেতা সমাগম ছিল না। কিন্তু আজ (শুক্রবার) কাস্টমার সামাল দিতে অতিরিক্ত সেলসম্যান নিতে হচ্ছে।

সায়েন্সল্যাব এলাকায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শন মোর্শেদ বলেন, আজ (শুক্রবার) আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মিরপুর রোডে পুরোটাই আজ যানজট। কিছু কিছু পরিবহনকে আমরা বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দিয়েছি। ঈদের মার্কেটের কারণে যত্রতত্র পার্কিংও হয়েছে কোথাও কোথাও। সেগুলো আমরা যতটুকু পেরেছি ব্যবস্থা নিয়েছি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ দক্ষিণের এডিসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রোজার শেষ দিকে রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা যায়। কারণ এ সময় প্রতিটি মার্কেট এলাকায় ভিড় বেশি থাকে। এ ছাড়া অধিকাংশ মার্কেটের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। যে কয়েকটি মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা আছে তাও যথেষ্ট নয়। রাস্তায় কোনো গাড়ি দাঁড়াতে বা পার্কিং করতে না দিলেও, যাত্রীর উঠতে নামতে যে সময়টুকু লাগে তাতেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

এদিকে যাত্রাপথের অতিরিক্ত দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে শুক্রবার ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষেরা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনে যাত্রা শুরু হবে ১১ জুন থেকে। আর বাসের বিশেষ যাত্রা শুরু হবে ১৪ জুন এবং লঞ্চের ১১ জুন থেকে। কিন্তু সরকারি ছুটি হিসাব করে অনেকেই ১৪ ও ১৫ জুনের টিকেট সংগ্রহ করেছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ ওই দিনের টিকেট না পেয়ে শুক্রবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এদিন রাজধানীর সব বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, বিশেষ ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করতে না পেরে অনেকেই আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। সোহাগ পরিবহনের গাবতলী শাখার ম্যানেজার সোলাইমান হোসেন বলেন, শুক্রবার থেকে যাত্রী চাপ বেড়ে গেছে, তাই প্রতিদিনের বহরে বাড়ানো হয়েছে বাসের সংখ্যা। কল্যাণপুরে হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার রতন বলেন, ঈদুল ফিতরের আগে যাত্রীদের যে চাপ থাকে তা শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads