• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অর্ধেক আমই নষ্ট হচ্ছে

বাংলাদেশে বছরে যে আম হয় তার অর্ধেকের বেশিই অপচয় হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

অর্ধেক আমই নষ্ট হচ্ছে

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০১৮

বাংলাদেশে বছরে যে আম হয় তার ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেকের বেশিই অপচয় হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ ভুল সংগ্রহ পদ্ধতি। এই হিসাব ফলন থেকে শুরু করে খাবারের ঘর পর্যন্ত। এর মধ্যে ফলন-পূর্ববর্তী অপচয় ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ; বাকিটা ফলন-পরবর্তী, যাকে ‘পোস্ট হারভেস্ট লস’ বলা হয়। এমন তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ফল ও সবজির ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সংগ্রহ-পরবর্তী লোকসান’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও। এ বছরই প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি ও ফলের অপচয়ের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে; উঠে এসেছে বাংলাদেশে আমের অপচয় প্রসঙ্গ।

এফএও ২০১৩ সালের সর্বশেষ বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম বলে উল্লেখ করেছিল। এরপর প্রতিবছর যে হারে আম উৎপাদন বেড়েছে সেই অনুপাতে আরো দুয়েকধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের অবস্থান। শেষ ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন চারগুণ বেড়ে গত বছর পৌঁছায় সাড়ে ১১ লাখ টনে। উৎপাদিত এ আমের অর্ধেক নষ্ট হলে এতে অর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত- তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি এফএওর প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাষি পর্যায়ে প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য ৩৫ টাকা। ফলে ৫৪ শতাংশ অপচয়ে চাষি পর্যায়ে লোকসান দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি (২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)। আর ভোক্তা পর্যায়ে এই আমের গড় দাম ৬০ টাকা ধরলে দেশের সার্বিকভাবে আমে লোকসান হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি (৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা)।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ফলন-পরবর্তী লোকসানের অন্যতম কারণ ভুল সংগ্রহ পদ্ধতি। এ কারণে প্রায় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ আম নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বাগান থেকে পাইকারি বাজারে যত্রতত্র উপায়ে আম পৌঁছাতে এর ওজন ১ দশমিক ৯ শতাংশ ‘লস’ হয়। এরপর এসব আম অঞ্চলিক মোকাম থেকে শহরের মোকামে পৌঁছায়, যার দূরত্ব ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ সময় পরিবহনে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ওজন কমে ও যান্ত্রিক কারণে আরো কিছু অপচয় হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আম সংগ্রহের পাঁচ দিন পর ২৫ দশমিক ১ শতাংশে পচন ধরে, যা আর খাবারের উপযোগী থাকে না।

সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও দেশের অভ্যন্তরীণ আমের বাজার পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অপচয় রোধ করা গেলে বাড়তি টাকা যোগ হবে সার্বিক বাজারে। এ খাত আরো বড় হবে। সারা দেশের ২২টি জেলায় এখন আমের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। অপচয় ঠেকানো গেলে এ কার্যক্রম আরো বাড়বে।

আমের এমন অপচয়ের তথ্য রয়েছে দেশের গবেষণায়ও। আমের মান উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও অপচয় রোধে পরিচালিত ২০১৬ সালের আম মৌসুমে গবেষণাটি করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (সাবেক আম গবেষণা কেন্দ্র)। গবেষণা-সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে জানান, তাদের গবেষণায় দেশে আমের ফলন-পরবর্তী অপচয়ের হার ৩১ শতাংশ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ উৎপাদন বেশি হলেও বিপুল পরিমাণ আম দেশের পুষ্টিতালিকায় যোগ হচ্ছে না। তাদের গবেষণায় আরো দেখা গেছে, জাতভেদে অপচয়ের হার কম-বেশি হচ্ছে। ল্যাংড়া জাতের আমের ফলন-পরবর্তী অপচয় ২৫ শতাংশ, ফজলিতে ৩০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি অপচয় হচ্ছে ক্ষীরসাপাতি আমের। এই আমের অপচয় হয় উৎপাদনের ৩৫ শতাংশেরও বেশি। আতিকুর রহমান বলেন, শুধু গাছ থেকে আম সংগ্রহ ও খাওয়া পর্যন্ত এ অপচয় খুবই উদ্বেগজনক। সনাতন পদ্ধতিতে আম ব্যবস্থাপনার কারণেই এসব আম পচে নষ্ট হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে সবাই উদাসীন। একটু সচেতন হলেই এ অপচয় রোধ করা সম্ভব।

এফএও এবং দেশি- উভয় গবেষণা বলছে, প্রচলিত সনাতন পদ্ধতিতে আহরণ ও সরবরাহের পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে এই অপচয় অনেকাংশে কমে আসবে। কয়েকটি ‘সঠিক পদ্ধতির’ ব্যবহারে আমের অপচয় কমে দাঁড়াবে ১৫ শতাংশের নিচে।

দেশের আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত আমের আদি ভূমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এরপরই রয়েছে রাজশাহী। এর বাইরে গত এক দশক চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং নড়াইলেও বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। আর গত ছয়-সাত বছর পার্বত্য চট্টগ্রামেও আমের চাষ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা প্রতিবছরই উৎপাদন বাড়াতে নানা ধরনের কার্যক্রম নিলেও অপচয় ঠেকানো যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads