• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
স্বর্ণের দাম যেন ‘পাগলা ঘোড়া’

সংগৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

স্বর্ণের দাম যেন ‘পাগলা ঘোড়া’

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২৮ আগস্ট ২০১৯

লাগামহীনভাবে ছুটছে স্বর্ণের দাম। গত দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে দেশের বাজারে ৬ দফা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে মূল্যবান ধাতুটির। এমন অবস্থায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ২০১২ সালের পরে সর্বোচ্চ উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই স্বর্ণের দাম অতীতের সব রেকর্ডও ভাঙতে পারে এমন ধারণা সংশ্লিষ্টদের।  

যেখানে চলতি বছরের শুরুতেই (জানুয়ারি) প্রতি ভরি ভালোমানের স্বর্ণের (২২ ক্যারেট) দাম ছিল ৪৮ হাজার ৯৮৮ টাকা, গতকাল থেকে সেটা হয়েছে ৫৮ হাজার ২৮ টাকা। অর্থাৎ সাত মাসের মধ্যেই ক্রেতাকে বাড়তি গুণতে হচ্ছে ৯ হাজার টাকা। এমন অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সাধারণ মানুষসহ স্বর্ণের বাজারে। 

সর্বশেষ গতকাল দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। গতকাল মঙ্গলবারসহ চলতি মাসে চতুর্থবার ও আগের মাসের শেষ ১৫ দিনে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। শেষ দফায় ভরিতে বাড়ছে ১ হাজার ১৬৬ টাকা। গত সোমবার পর্যন্ত দেশের বাজারে প্রতি ভরির ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা। একইভাবে ২১ ও ১৮ ক্যারেট এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দামও বেড়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্য বলছে, বর্তমানে স্বর্ণের দাম ২০১৩ সালের মের পর সবচেয়ে বেশি। গতকাল প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫২৬ মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী এ দর। আর আগস্টে বেড়েছে বেশি হারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১১ সালের শেষে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ ডলারে উঠেছিল। এরপর ২০১৩ সালে এসে সে দর কমতে থাকে। দেশেও সে সময় স্বর্ণের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল। সে সময় স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ৬৪ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০১৬ সালের শুরুতে স্বর্ণের দাম কমে ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে যায়। সে সময় দেশেও স্বর্ণের দাম কমে ভরিপ্রতি ৪১ হাজার টাকায় নেমেছিল।

এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধেও প্রভাব আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্কারোপের পর চীন ডলার ছেড়ে স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়িয়ে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের সংকটে দাম ঊর্ধ্বগতি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ছে বলেই বাধ্য হয়ে আমরাও দাম  বাড়াচ্ছি। আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় আড়াইশ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় একুশ হাজার টাকা। সে হিসাবে সমন্বয় করেই দেশে দাম বাড়ানো হয়েছে।

যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় হার ও অবৈধ বড় বাজার স্বর্ণের দাম নির্ধারণে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে দাম বাড়ানোর সময় সেসব বিষয় বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। কমানোর সময় এসব বিষয় অজুহাত হিসেবে দেখান ব্যবসায়ীরা।

গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, যখন যে দরই হোক, দেশের বাজারে প্রতিটি ধাপে কমপক্ষে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ানো হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে যে দর ছিল, তার জন্য থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি হওয়ার কথা। তবে সবসময় সমিতি কমপক্ষে এক আউন্স হিসেবে দাম বাড়ায়।

এদিকে স্বর্ণ নীতিমালা অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ থেকে ৪০ টন স্বর্ণ প্রয়োজন হয়। যার বড় অংশ আসে বিদেশফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে। সামান্য কিছুটা আমদানি করে ও বাকিটা পুরনো স্বর্ণ গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। অর্থাৎ দেশে বৈধভাবে বিশ্ববাজার থেকে কেনা স্বর্ণের পরিমাণ খুবই সামান্য। সম্প্রতি বৈধ স্বর্ণ আমদানির কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দেশে স্বর্ণের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় কতটা যৌক্তিক সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ক্রেতাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads