• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাজারে অরাজকতা

প্রতীকী ছবি

পণ্যবাজার

বাজারে অরাজকতা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২০

দেশে কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। তার পরও সাধারণ মানুষ করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বাজারে। তাতে সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মজুত রাখা যায় এমন নিত্যপণ্যগুলোর দাম ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। গত ৯ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের খবরের পর থেকেই বাজারে অস্থিরতা শুরু হলেও শেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তা রূপ নিয়েছে ভয়াবহ অরাজকতায়।

এখন প্রতি কেজি চাল কিনতে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৫ থেকে ৮ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। সম্ভবত দেশে এর আগে এত অল্প সময়ে চালের দাম কখনো এতটা বাড়েনি। এছাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে প্রতি ডজন ডিম ২০ থেকে ২৫ টাকা, ডাল প্রতি কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা, আলু ৯ থেকে ১০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, রসুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আদা ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে চিনি, তেল, লবণ, ছোলা ও আটা।

অন্যদিকে মাছ, মুরগি, সবজির দামও আগের তুলনায় বেশ বেশি। সঙ্গে বিদেশি শিশুখাদ্য ও ডায়াপারের দামও বাড়তি। সব ধরনের জীবাণুনাশকগুলোর দাম তো আগে থেকেই বেড়ে গেছে। করোনার কারণে ওই সব পণ্যও এখন বেশ প্রয়োজনীয়। সবমিলিয়ে বাজারে গেলে পাগলপ্রায় অবস্থা। তার পরেও হুজুগে অতিরিক্ত দাম দিয়ে এসব পণ্য কিনতে দেখা গেছে অনেককে।

এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে সাধারণ মানুষ। যারা দিন এনে দিন খাচ্ছেন। তাদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে সবগুলো পণ্যই নিত্যপ্রয়োজনীয়। যেগুলোর দাম খুব বেশি বেড়েছে, সেগুলো অতিপ্রয়োজনীয়। আর ওইসব পণ্যই মজুত রাখছেন অন্যরা। তাদের বেশি বেশি কেনার কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। যার কারণে বাড়তি গুনতে হচ্ছে অন্য মানুষদের।  

গতকাল বিভিন্ন বাজার ও এলাকার মুদি দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে অন্যান্য জায়গা ফাঁকা থাকলেও বাজারগুলোয় মানুষের ব্যাপক ভিড়। মূলত ৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এই পরিস্থিতি। তবে দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে মজুতের প্রতিযোগিতা। যারা প্রয়োজনে পরিবারের জন্য ৫-১০ কেজি চাল কিনতেন, তারা কিনছেন এক-দুই বস্তা। সঙ্গে ৫-১০ কেজি করে তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য পণ্য।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বললেন, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চালের দাম। আড়তে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এ করণে চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনীয় সরবরাহ দিতে পারছেন না তারা। এছাড়া বাড়তি চাহিদার অন্যান্য পণ্যগুলো সরবরাহের জন্য বিশেষভাবে তাগাদা দিয়েও মিলছে না। সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো অর্ডার নিচ্ছে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনছেন। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

তবে বিক্রেতাদের এমন দাবি পুরোপুরি সত্য নয়। গত কয়েক দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে কয়েকশ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। ওই সময় তারা বেশি দামে পণ্য কেনার কোনো প্রামাণ দেখাতে পারেনি। পূর্বের মুজত পণ্যই বেশি দামে বিক্রি করছিল খুচরা ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় সরকার অতিরিক্ত পণ্য মজুত না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সেটা কেউই মানছেন না।

বাজারে পণ্যের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই এমনটা বোঝা যায় বাজার ঘুরেও। কোনো দোকানে পণ্য নেই-এমন দৃশ্য দেখা যায়নি কোথাও। শুধু মুখে সবাই সংকটের কথা বলছেন, বেশি দাম নেওয়ার জন্য। এমনকি রাজধানীর বিভিন্ন আড়তগুলোতেও প্রচুর চাল ও অন্যান্য আড়তে ভরপুর পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেখানে আড়তদাররা মিলগেট থেকে বেশি দামে কেনার অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করছেন।   

দেশে খুচরায় সবচেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি হয় সুপারশপগুলোতে। বিভিন্ন শপের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, সুপার শপগুলোতে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্য মজুত আছে। তারা এ সময়ে নায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করবেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, অনেকেই এখন পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে খোলা বাজারে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির মুখোমুখি হচ্ছেন। কিন্তু সুপার মার্কেটগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির যথেষ্ট পরিমাণ মজুত আছে। বেশি বেশি কেনার জন্য এমন হচ্ছে।

জাকির হোসেন বলেন, কোথাও কোনো পণ্যের সংকট আমরা দেখিনি। ন্যায্য দামে ও সরবরাহ সংকট ছাড়া নিরাপদ পরিবেশে কেনার বিষয়ে সবাই নিশ্চিত থাকতে পারেন। অযথা আতঙ্কে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় বা মজুতের কোনো প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে বেশ কয়েকদিন ধরেই করোনা ভাইরাসের কারণে অথবা আসন্ন রমজানে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে আশ্বস্ত করে চলেছে সরকারের বিভিন্ন মহল। এমন অবস্থায় জনগণকে বাজারে গিয়ে অতিরিক্ত কেনাকাটা না করার অনুরোধ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের যে জোগান আছে, তাতে আমাদের কোনো অবস্থান থেকেই কোনো সমস্যা হওয়া কথা না। তাই কেউ যেন স্বাভাবিক কেনাকাটার চেয়ে অতিরিক্ত  কেনাকাটা না করে।

অন্যদিকে করোনা আতঙ্কে বেশি বেশি চাল কেনায় গত কয়েক দিনে চালের দাম বেড়ে গেছে। এর পরিপেক্ষিতে গতকাল করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বাজারে চালের দাম বাড়ার খবরের মধ্যেই ‘যথেষ্ট মজুত’ থাকার কথা জানিয়ে অভয় দিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে বর্তমানে সোয়া ১৪ লাখ চাল মজুত আছে। সুতরাং চাল-গম নিয়ে ভোক্তাদের ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads