• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
অভিযানে কতটা কমেছে দ্রব্যমূল্য

সংগৃহীত ছবি

পণ্যবাজার

অভিযানে কতটা কমেছে দ্রব্যমূল্য

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২০

পাইকারি বাজারে অভিযানের পরে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম। তবে স্বস্তির দেখা মেলেনি চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যে। দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এর নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েকটি সংস্থা, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডজনখানেক টিম প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে। তারপরও কেন পণ্যের দাম কমছে না? এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

বাজারদর বিশ্লেষণ করে এমন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এখনো বলছে, দেশে ১৬ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশি। পণ্যভেদে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে এমন পণ্যও রয়েছে ওই তালিকায়। এ ছাড়া বাজারে এখন প্রতি কেজি চাল কিনতে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৫ থেকে ৮ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে গতকালও। সম্ভবত দেশে এর আগে এত অল্প সময়ে চালের দাম কখনো এতটা বাড়েনি।

এ ছাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে রয়েছে ডিম, আলু, আদা, রসুন, ডাল, চিনি, তেল, লবণ, ছোলা ও আটার দাম। কমেনি মাছ, মুরগি, সবজির দামও। সঙ্গে বিদেশি শিশুখাদ্য ও ডায়াপারের দামও বাড়তি। সব ধরনের জীবাণুনাশগুলোর দামতো আগে থেকেই বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় প্রতিদিন বাজারে অভিযানের সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিছু ভোক্তা। গতকাল রামপুরা বাজারে সাজ্জাদ হোসেন নামের একজন শিক্ষক বলেন, বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের শুধু ধরা হচ্ছে। কোন আমদানিকারক, সরবরাহকারী, মিলমালিককে ধরা হচ্ছে না কেন? তারাই তো সিন্ডিকেটের প্রথম সূচনা করেন।

তবে কিছু ক্রেতা অভিযানের সুফলও পাচ্ছেন বলে জানিয়ে বলেন, গতকাল কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ ৭০ টাকা ছিল। এরপর অভিযান পরিচালিত হয়। ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে দাম ৫০-এ নেমে যায়। আজও সেই দাম রয়েছে। অর্থাৎ কিছুটা কাজ হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ। খাদ্যসংকটের দুর্ভাবনায় নিত্যপণ্য মজুদ করা হিড়িক লেগেছে। সকলে একসাথে পণ্য কেনায় বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই প্রবণতাও মহামারীর থেকে দ্রুত ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবারের পর থেকে প্রায় সারা দেশে পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে স্বল্প অভিযানে দাম নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সম্ভব নয়।

এদিকে প্রতিদিন সারা দেশে কয়েকশ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হচ্ছে। কারাদণ্ডও হচ্ছে ডজনখানেকের। তারপরও প্রতিদিন নতুন নতুন বাজারে, নতুন নতুন মজুদদার বেরিয়ে আসছে। গতকালও দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি চালের বাজার বাবুবাজারে র্যাবের অভিযানে এমন বেশ কয়েকটি আড়তদারকে জরিমানা করা হয়েছে। ওই সময় দেখা যায়, মিলমালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা সবক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীরা কারসাজিতে জড়িত। প্রতিটি স্তরেই চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।

আগের দিন (রোববার) র্যাব অভিযান চালিয়েছিল রাজধানীর শ্যামবাজারে বৃহৎ কাঁচাপণ্যের আড়তগুলোতে। তার আগের দিন যাত্রাবাড়ীর আড়তে। দুই জায়গায়ই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বেশি দামে পণ্য বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। ৬৫ টাকা কেজি দরে তারা যে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন, তা কত টাকায় কেনা হয়েছে, সেই কাগজ দেখাতে বললে ব্যবসায়ীরা তা দেখাতে পারেননি, যা অর্ধেক দামে কেনা বলে মৌখিকভাবে জানা যায়।

এ ব্যাপারে অভিযান পরিচালনাকারী র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাজারে রাহাজানি চলছে। ভাবতেই কষ্ট হয় মানুষের বিপদে এমন আচরণ দেখে। তিন দিন আগেও যে পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ২৮-৩১ টাকা সেটা কোনো কারণ ছাড়াই সেটা বিক্রি করেছে ৬৫-৭০ টাকায়। আমরা যখন যাত্রাবাড়ী আড়তে ক্রেতা সেজে ইউনিফর্ম ছাড়া ফোর্স নিয়ে প্রবেশ করলাম তখনো দেখলাম ওই চিত্র। কিন্তু যখনই বুঝল মোবাইল কোর্ট আসছে, তখনই পেঁয়াজ হলো ৩৫-৪০ টাকা।

তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়ীকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। এমন অভিযান প্রতিদিন চলতে থাকবে। যতক্ষণ না বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। যারাই বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনা নিয়ে বাজারে আতঙ্ক তৈরি হওয়ার পর গত বুধবার থেকে বাজারে পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে থাকে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যে দাম এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ‘দেশে যথেষ্ট খাদ্যপণ্যের মজুদ আছে এবং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’ এমন বক্তব্য দেওয়া হলেও তা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বরং প্রতিদিনই বেশির ভাগ পণ্যের দাম টানা বেড়েই যাচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে প্রতিদিন কয়েকটি টিম গঠন করে অভিযান পরিচালনা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়েও ব্যবসায়ীদের অরাজকতা উঠে এসেছে তাদের অভিযানে। গতকাল ঢাকা মহানগরীর ইত্তেফাক মোড়ের দক্ষিণ পাশে হাটখোলা রোডে অবস্থিত সায়েন্টিফিক দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ওই অপরাধে মডার্ন সায়েন্টিফিক সপ এবং হাটখোলা সায়েন্টিফিক সপকে ৫০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, সুযোগ পেয়ে শিশুখাদ্যে প্রতারণায়ও একটি প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ হয়েছে গতকাল। ভোক্তা অধিদপ্তরের ৬টি টিম ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রলায়ের ৩টি মনিটরিং টিমে ঢাকা মহানগরীর ১২টি বাজারসহ বিভিন্ন সুপার শপ, শিশুখাদ্য, সার্জিকেল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান বিএমএ মার্কেট ও তোপখানা হক মার্কেটে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে শিশুখাদ্যের দাম বেশি নেওয়ায় জরিমানা গুনেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads