• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

চাঁদপুরের মতলব পৌর এলাকার বড়দিয়া আড়ংবাজার এলাকার বড়দিয়া আড়ংবাজার এলাকায় নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত মিস্ত্রীরা

ছবি বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

চাঁদপুরে বর্ষার শুরুতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মিস্ত্রীরা

  • মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ
  • প্রকাশিত ২১ জুন ২০১৮

পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোধা নদী বিধৌত চাঁদপুর জেলা। বর্ষায়  নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। এ বছরও বর্ষার শুরু থেকে নৌকা তৈরি শুরু হয়েছে। জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার বড়দিয়া আড়ং বাজার এলকায় নৌকা তৈরির করার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মিস্ত্রীরা। কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে এসব নৌকা বিক্রি।

মতলব পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বড়দিয়া আড়ং বাজার ও এর আশাপাশের এলাকা গত সোমবার ঘুরে দেখা গেছে, নৌকা তৈরির প্রায় ১৫টি কারখানা ও ছোট ছোট দোকান। ঈদের আমেজ না কাটলেও মিস্ত্রীরা নৌকা তৈরির কাজে লেগে পড়েছেন। অনেকেই নৌকা তৈরি করে পানিতে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ কারখানায় ও ডাঙায় রেখেছেন। আর এসব নৌকা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।

আড়ং বাজারের দক্ষিণ পাশের নৌকা তৈরি কারখানার মালিক মো. বাবুল গাজী। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করেন। বাবুল গাজী জানান, যেসব এলাকায় সড়ক ভালো ওই সব এলাকার মানুষের চলাচলে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষগুলোর বর্ষায় চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। কারণ বর্ষায় পানি আসলে খাল, বিল, পুকুর ও অন্যান্য জলাশয় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। গ্রামগুলোর চারপাশে পানি থৈ থৈ করে। তখন এসব লোকজনের চলার জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা।

একই এলাকার আরেক কারিগর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা যে সব নৌকা তৈরী করি স্থানীয়ভাবে কোষা নৌকা বলা হয়। এসব কোষা নৌকা তৈরি করতে দুইজন মিস্ত্রীর একদিন সময় লাগে। এতে ব্যবহার হয় কড়াই ও চাম্বল কাঠ। মজুরী, কাঠসহ ব্যয় হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। বিক্রি করেন ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। আবার অনেক সময় সাইজে ছোট হলে দামও কম হয়। আমরা গত বছর ৫০টিরও বেশী নৌকা বিক্রি করেছি। এখন নৌকা তৈরি করে রেখেছি; কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে।

কারিগর জামাল গাজী জানান, নৌকা তৈরী ও বিক্রি মৌসুমী কাজ। বাকী সময় তারা অন্যান্য ফার্নিচার সামগ্রী তৈরী করেন। এক সময় নৌকার অনেক কদর ছিল। এখন বড় বড় নৌকা খুব কম তৈরি হয়। কারণ স্টীল দিয়ে অনেকেই ট্রলার তৈরি করে যাত্রী ও মালামাল বহন করেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৌকার কদর এখনো কমেনি।

মতলব মোরকদি গ্রামের নৌকা কারখানার মালিক মো. হান্নান প্রধানিয়া জানান, গত ২০ বছর ধরে তিনি নৌকা তৈরি করে বিক্রি করেন। তার কারখানায় এখনও ২০টির মত নৌকা তৈরি করে জমা রেখেছেন। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার চরাঞ্চলের মধ্যে হাইমচর, সদরের কিছু অংশ, মতলব উত্তর, হাজীগঞ্জ এলাকার লোকজন তাদের কাছ থেকে এসে নৌকা পাইকারী ও খুচর ক্রয় করেন।

হাইমচর উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সরদার জানান, এ ইউনিয়নের ৩টি এলাকা সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। আর কিছু এলাকায় আংশিক। এর মধ্যে মাঝির বাজার, বাংলা বাজার ও বাউচর এলাকার প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা সব সময়ই নৌকা দিয়ে চলাচল করেন। তবে কিছু এলাকায় এখন চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরী হচ্ছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, তার ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৬ ওয়ার্ডই চরাঞ্চল। বর্ষা আসলে এসব চরের ১৫ হাজার বাসিন্দার নৌকাই একামাত্র বাহন। এর মধ্যে বর্ষার সড়কের সাথে বিচ্ছিন্ন থাকেন পষন্নপুর, নরর্দী, চালতাতলী, ঝড়–য়া, পাইকাদী, গুক্ষদী, ইব্রাহীমপুর, হিন্দলী, চরপতেজংপুর, চরিলামপুর, থানেপুর ও চরকালিরচর গ্রামের মানুষ। তারা বর্ষায় নৌকা দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত সড়ক তৈরী করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads