• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
হাসপাতালে সন্তানকে রেখে চলে যাওয়া মা ফিরে এসেছেন!

কুমিল্লা ঝাউতলায়  মা ও শিশু হাসপাতালে মা রোকেয়া বেগম

সারা দেশ

হাসপাতালে সন্তানকে রেখে চলে যাওয়া মা ফিরে এসেছেন!

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বেসরকারি হাসপাতালে শিশু সন্তানের চিকিৎসার খরচ বাবদ দুই লাখ টাকার খবর দেখে সন্তান রেখে পালিয়ে যাওয়া মা ফিরে এসেছেন ! কুমিল্লা ঝাউতলায়  মা ও শিশু হাসপাতালে ছাব্বিশ সপ্তাহের পর ভূমিষ্ঠ এক অপরিণত সন্তানকে বাঁচানোর জন্য ভর্তি করান। ছয় দিনে প্রায় একলাখ টাকার বিল দেখে দরিদ্র শাহ আলম রোকেয়া দম্পত্তি তাদের সন্তানকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পালিয়ে যাওয়া বাবা-মার সন্ধানে নামে পুলিশ।

বুধবার দুপুরে শিশুটির মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ব্যয় নির্বাহের  আশ্বাস দেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা সিভিল সার্জন।

কুমিল্লা ঝাউতলায়  মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধী শাহ আলম রোকেয়া দম্পত্তির অপরিণত সন্তানসন্তানকে কেন ফেলে রেখে চলে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুটির মা রোকেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী দিন মজুর। ২০০৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়। তারপর আমাদের দুটি সন্তান হলেও একটি সন্তানও বাঁচেনি। প্রথম সন্তানটি জন্মের তিন পরেই মারা যায়, দ্বিতীয় সন্তানটি জন্মের দশ দিন পর মারা যায়। এবার যখন আমাদের তৃতীয় সন্তানটিও সাত মাসে জন্ম নেয় তখন আমরা আমাদের সন্তানটিকে বাঁচানোর জন্য এই হাসপাতালে ভর্তি করাই। পরে হাসপাতালের ছয় দিনে চিকিৎসার বিল এক লাখ টাকার বিল হয়।  বিল বেশি হলে আমরা স্বামী স্ত্রী চিন্তায় পড়ি। দারিদ্রের কারনে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে বাচ্চাটিকে রেখে আমরা চলে যাই। 

তিনি বলেন, আমাদের সন্তানটি বাঁচবে তাও ভাবতে পারিনি। আমাদের সন্তানটিকে হাসপাতালে রেখে লুকিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমি ও আমার স্বামী পুরোটা রাস্তায় কান্না করেছিলাম। তারপর বাড়ী ফিরে  আমার স্বামী অনেকটা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আল্লাহ আমার সন্তানকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং সকলের সহযোগিতায় আমি আমার সন্তানটিকে ফিরে পেয়েছি এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

এদিকে হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর  বদিউল আলম চৌধুরী  এবং হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তানজিদা চৌধুরী সম্পা জানান, গত ১৮ আগস্ট হাসপাতালে এসেছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের শাহ আলম ও রোকেয়া বেগম দম্পতি। সেখানে রোকেয়া বেগমের ছেলে সন্তান হয়। পরে ২৪ আগস্ট বিকেল বেলা থেকে এই দুজনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চাটি তখন থেকে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয় এবং এখনো চিকিৎসা চলছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ জানানোর পর আজ  শিশুটির মা রোকেয়া বেগম সন্তানকে ফিরে পেতে হাসপাতালে আসেন।

জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর জানান, বিষয়টি যখন গণমাধ্যমে জানলাম তখন থেকে জেলা পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলি। তারপর পুলিশ ওই দম্পতির ঠিকানা খুঁজে বের করেন। শিশুটির মা এসেছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় বহন করবো।

পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, দারিদ্রের কারনে একটি শিশু সন্তানকে চিকিৎসার খরচ না চালিয়ে বাবা মা হাসপাতাল থেকে চলে যায়। বিষয়টি খুব নাড়া দেয়। আমরা কুমিল্লা পুলিশের কর্মকর্তারা এ শিশুটির চিকিৎসার জন্য একটি ফান্ড গঠন করেছি। শিশুটির চিকিৎসার জন্য দরিদ্র এ দম্পত্তিকে আর ভাবতে হবে না।

জেলা সিভিল সার্জন ডা:মজিবুর রহমান জানান, এমন অপরিপক্ক বয়সের শিশুর চিকিৎসা খুব ব্যয় বহুল ।  সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকহীন শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেন। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। সর্বনিন্ম ব্যয়ে চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। সেক্ষেত্রে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকেও সব সহায়তা করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads