• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
পদ্মায় বিলীন ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

পদ্মার ভাঙনে গত কয়েক দিনে নড়িয়ার মূলফৎগঞ্জ বাজারের প্রায় ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

পদ্মায় বিলীন ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

  • শরীয়তপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পদ্মার ভাঙনে গত কয়েক দিনে নড়িয়ার মূলফৎগঞ্জ বাজারের প্রায় ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অচিরেই নদীতে হারিয়ে যেতে পারে নড়িয়া (মূলফৎগঞ্জ) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভাঙন আশঙ্কায় বন্ধ রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা সেবা। অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের মালামাল। পাশের ভবনে ভর্তিকৃত রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের কবলে থাকা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।  স্থানীয়রা জানান, পদ্মার ভাঙনে গত সোম, মঙ্গল, বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার মিলিয়ে নড়িয়া উপজেলার মূলফৎগঞ্জ বাজারের ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। এ নিয়ে গত সাত দিনের ভাঙনে ৩০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ২০০ বছরের পুরনো এ বাজারের আরো ১৩০০ প্রতিষ্ঠান।

তাছাড়া ভাঙনের আতঙ্কে থাকা পাশের কেদারপুর ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের দেড় হাজার পরিবারের মধ্যে প্রায় ৪০০ পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে। ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

মূলফৎগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুর হোসেন দেওয়ান কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমাদের কিছুই অবশিষ্ট রইল না। আল্লাহ জানেন আমাদের ভাগ্যে কী আছে। বাজারের প্রত্যেকটি ব্যবসায়ী আতঙ্কিত।

নুর হোসেনের একটি ভবন গত সোমবার বিকাল ৫টার দিকে নদীতে ধসে পড়ে। পাশের আরেকটি তিনতলা ভবনে তার বেসরকারি ক্লিনিক ছিল। সেই ভবনটিও বুধবার দুপুরে ধসে পড়ে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নড়িয়া উপজেলা শহরের পাশে কেদারপুর ইউনিয়নের মূলফৎগঞ্জ বাজারটি প্রায় ২০০ বছর আগে গড়ে ওঠে। নড়িয়ার সবচেয়ে বড় বাজার হওয়ায় এখানে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বাজারে দেড় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বছর বাজার থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে ছিল নদী। এ বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে নদী বাজারের কাছে চলে এসেছে। গত সোমবার সকাল থেকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়।

অপরদিকে গত রোববার রাতে কেদারপুর গ্রামের ২০০ মিটার এলাকা হঠাৎ ধসে পড়েছে। রাতে ওই এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে কেদারপুর ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের মানুষ তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করে।

মূলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ও কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, বসতবাড়ি, ফসলি জমির পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বিলীন হয়ে গেছে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার তহীদুল বাশার বলেন, যেকোনো সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। তাই রোগীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকটবর্তী কয়েকটি ভবনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ভাঙনের কারণে মূলফৎগঞ্জ বাজারের প্রায় দেড় হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। বাজারটির ওপর ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার পরিবার নির্ভরশীল। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে।

ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে উল্লেখ করে ইউএনও সানজিদা বলেন,  ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads