• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
শহিদুলের এক টাকার চা তিন টাকার পুরি

এখনো এক টাকা কাপ চা বিক্রি করে যাচ্ছেন শহিদুল

সংরক্ষিত ছবি

সারা দেশ

শহিদুলের এক টাকার চা তিন টাকার পুরি

  • জাহিদ হাসান মাহমুদ মিমপা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম গত এক দশকে বেড়েছে অনেক; বাড়েনি শুধু শহিদুলের চায়ের দাম। এখনো এক টাকা কাপ চা বিক্রি করে যাচ্ছেন তিনি। শুধু চা নয়, তার তিন টাকা দামের পুরিও বেশ আকর্ষণীয় মানুষের কাছে। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ভিড় জমায় শহিদুলের দোকানে পুরি-চা খাওয়ার জন্য। বাজার বিবেচনায় কঠিন মনে হলেও দশ বছর ধরে দামের এই ধারাবাহিকতার কোনো হেরফের হয়নি। চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা মাহিও শহিদুলের দোকানের পুরি-চা খেয়ে গেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-সোনাইণ্ডী সড়কের পাশেই মাক্তাপুর কলাবোনা গ্রাম। নাচোল বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে গ্রামটির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই গ্রামেরই ষাটোর্ধ্ব সোহরাব আলীর বিশ বছর বয়সী ছেলে শহিদুল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পাট গুটিয়ে চায়ের দোকান নিয়ে বসেন। এটি দশ বছর আগের কথা। দোকান বলতে বাড়ির সামনে বারান্দায় টিন ও মাটির টালি দিয়ে চালা নামিয়ে গোটা দশেক মানুষের বসার ব্যবস্থা। সারা দিন নয়, বিকাল থেকে চলে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। বিনোদনের জন্য ডিশ সংযোগসহ রয়েছে টেলিভিশন। শুরুর সময় আশপাশের দোকানে চা ২ টাকা কাপ বিক্রি হলেও শহিদুল শুরু করেন এক টাকায়। পাশাপাশি পুরি, পেঁয়াজু ও জিলাপিও বিক্রি করছেন। কারিগর বলতে মা শেফালী বেগম ও শহিদুল নিজে। এরপর অনেক বেলা গড়িয়ে গেলেও চায়ের দাম এক টাকা কাপই রয়ে গেছে। পুরিও শুরু থেকে ৩ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম কম রাখার কারণ হিসেবে শেফালী বেগম জানান, শহিদুলের বাবার ইচ্ছে, তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এক টাকা কাপ চা মানুষকে খাওয়াবেন। অল্প দামে বিক্রি করলেও যা লাভ হয়, তা দিয়ে সংসার চলে যায়। তাছাড়া বাবা-ছেলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কৃষিকাজ করেন। আগামীতেও অল্প লাভে মানুষকে সেবা দিতে চান। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, তাই অল্প লাভেই সন্তুষ্ট মা শেফালী বেগম।

শহিদুল জানান, প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ কাপ চা বিক্রি হয়। আর পুরি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০টি। অবশ্য কোনো কোনো দিন ১০০ থেকে ১৫০ কাপও চা বিক্রি হয়ে থাকে। বিকালে চা প্রস্তুত করে ফ্লাস্কে ভরে রাখেন।

বেড়াচৌকি গ্রাম থেকে পুরি-চা খেতে আসা মনসুর আলী জানান, ‘কোনো জায়গাতেই এখন আর তিন টাকার নিচে লাল চা নেই। অথচ দশ বছর ধরে এখানে ১ টাকা কাপ চা বিক্রি হচ্ছে। সততার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে।’

চা খেতে আসা গ্রামেরই পঞ্চাশোর্ধ্ব সাইদুর রহমান বলেন, সস্তা হলেও শহিদুলের চাসহ অন্যান্য খাবারের গুণগত মান ভালো।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads