• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মিলছে ইলিশ, খুশি জেলেরা

ইলিশ

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

মিলছে ইলিশ, খুশি জেলেরা

  • ভোলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মৌসুমের শেষ সময়ে এসে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে উপকূলীয় জেলা ভোলার বিভিন্ন নদ-নদী ও সাগর মোহনায়। কিছুদিন ধরে রুপালি এ মাছের সঙ্কটে এ জেলার জেলেপল্লীগুলোতে যে হতাশার চিত্র দেখা দিয়েছিল তার পরিবর্তে এখন সেখানে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জাল-নৌকা নিয়ে রাত-দিন নদীতে মাছ ধরছেন ভোলার বিভিন্ন উপজেলার লক্ষাধিক জেলে। হাসি ফুটেছে তাদের মুখে, আনন্দে মেতেছে জেলেপল্লীগুলো।

পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় সরগরম হয়ে উঠেছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া তীরবর্তী ভোলার মাছের ঘাট, আড়তগুলো। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক ও দর কষাকষিতে মুখরিত এখন ইলিশের বাজার। ভোলার দৌলতখান, তজুমুদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরার বিভিন্ন মৎসঘাটে ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার, পাইকার আর বেপারিরা এখন ব্যস্ত  সময় পার করছেন।

দূর-দূরান্তে পাঠাতে ইলিশ প্রক্রিয়াজাত করতে বেড়ে গেছে বরফের চাহিদাও। ব্যাপক চাহিদার কারণে বরফ সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বরফকল মালিকদের।

ভোলা জেলা মৎস্য কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, উজানের ঢল আর বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে মাছের উৎপাদন আরো বেড়ে যাবে। জেলে ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাটকা বড় হয়ে পরিণত ইলিশ হওয়ায় রুপালি এ মাছ সাগর থেকে নদীতে চলে আসছে। সে কারণেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে এখন। তারা বলেন, ইলিশ হলো গভীর পানির মাছ। নদ-নদীর পানি বাড়ায় সেখানে বিচরণ বেড়েছে ইলিশের। চলে আসছে নদী-সাগরের মোহনায়। মৎস্য প্রজনন সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকার কারণে বেড়েছে মাছের আকারও।

তবে ইলিশ ধরা পড়লেও আহরণ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ভোলার জেলেরা। কারণ নদীতে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করায় জলদস্যুদেরও উৎপাত বাড়ছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন জেলেরা। নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারলে অনেক লাভবান হবেন বলে জানান জেলেরা। তারা বলছেন, গত কয়েক মাস নদীতে ইলিশের দেখা না পাওয়ায়  আমরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেছি। কিন্তু এমন সময় ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে যে, আর কিছুদিন পরই ইলিশের প্রজনন মৌসুম শুরু হবে। মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এই সীমিত সময়ের মধ্যেও নিরাপদে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ধরতে পারলে তারা স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারবেন।

ভোলার বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে দেখে গেছে, নদী থেকে ঘাটে ভিড়ছে শত শত ট্রলার ও নৌকা। জেলেদের আহরণ করা মাছ আড়তে তুলে হাঁক-ডাক দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দামে সেসব মাছ কিনে নিচ্ছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা। এরপর দূর-দূরান্তে নেওয়ার জন্য ঝুড়িতে দ্রুত সংরক্ষণ করা হচ্ছে মাছগুলো। জেলেদের হাত থেকে আড়তদার, সেখান থেকে পাইকার এবং বেপারিদের হাত ঘুরে এসব মাছ চলে যাচ্ছে ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল, যশোরসহ দেশের বড় বড় আড়তে। এমনকি দেশের বাইরেও।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দৌলতখানের বিভিন্ন আড়তে এক কেজি ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।  ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের হালি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা হালি দরে।

দৌলতখান এলাকার জেলে মো. কাজল বলেন, এক সপ্তাহ ধরে নদীতে মাছ ধরা পড়ছে, সকালে ৬ ঝুরি মাছ আড়তে বিক্রি করেছি। তজুমদ্দিনের জেলেরা জানান, এতদিন নদীতে মাছ ছিল না, তাই আমরা অনেক হতাশার মধ্যে ছিলাম। অনেক ঋণ হয়েছে। আশা করি, এবার মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

মনপুরার তালতলা স্লুইস ঘাটের মৎস্য আড়তদার আলহাজ মো. ইউসুফ জানান, কিছুদিন আগেও হতাশা নিয়ে অলস সময় কাটিয়েছে জেলেরা। কিন্তু এখন বসে থাকার সময় নেই। কারণ ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে মৎস্যজীবীদের। আনন্দ ফিরে এসেছে জেলেপল্লীতে।

শহরের কালীনাথ রায়ের বাজারের শীবুর বরফকলের মালিক শীবু কর্মকার জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বরফের ব্যাপক চাহিদা তার এখানে। প্রচুর চাপ থাকায় বরফ বিক্রি করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে ঢাকাগামী লঞ্চ ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে ব্যাপক চাপ সামলাতে হয়।

ভোলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রজনন সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় পরিণত বয়স হয়েছে এ মাছের, আকারও বড় হয়েছে। পানি ও জোয়ার বাড়ার কারণে মাছের সাগর থেকে নদীর দিকে চলে আসছে ইলিশ। আবার কিছু মাছ ডিম ছাড়তেও উজানে আসছে। তাই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর। এভাবে ভবিষ্যতেও জাটকা ও প্রজননের সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকলে আমাদের জাতীয় উন্নয়নে আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে ইলিশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads