• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশি তরুণ

  • মেহেদী হাসান গালিব
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যে বয়স থেকে আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীরা ডাক্তার কিংবা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, ঠিক সেই বয়স থেকেই জোহান স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বড় হয়ে একজন বিখ্যাত ফুটবলার হবেন। খেলবেন বিশ্বসেরা ক্লাবগুলোর একটি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাটা সেই ছোট্টবেলা থেকেই। ফুটবলের প্রতি জোহানের এই ভালোবাসা দেখে অনেকেই বলতেন, ‘কী হবে এই ফুটবল খেলে? তার চেয়ে বরং পড়ালেখায় মন দাও।’ সেদিন প্রত্যুত্তরে জোহান তাদের কিছুই বলতে পারেননি। কিন্তু আজ তিনি তার সাফল্য দিয়ে যেন নীরবেই জবাব দিলেন সেসব নিন্দুককে। ফুটবলের হাত ধরেই জোহান স্থান করে নিলেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।

ভালো লাগা থেকে শুরু হলেও একসময় ফুটবল পরিণত হয় জোহানের নেশায়। ‘এয়ারটেল রাইজিং স্টার ২০১৪’তে বাংলাদেশের সব তরুণ ফুটবলারের মধ্য  থেকে সেরা ২০০তে  স্থান করে নেন তিনি। সেরা ফুটবলারদের নিয়ে আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে আসেন তিনজন কোচ। তারা জোহানের ফ্রি স্টাইল দেখে বেশ প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগান। তখন জোহান শুধু জাগলিং, মাথায় বল রাখতে ও পায়ের চারদিকে বল ঘোরাতে (এরাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড) পারতেন।

পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে জোহানের সঙ্গে পরিচয় ঘটে সাউথ আফ্রিকায় বসবাসরত বাঙালি সাঈদ মুক্তাসীদের সঙ্গে। মুক্তাসীদও ছিলেন একজন ফুটবল ফ্রি স্টাইলার। তিনি তার বিভিন্ন ফ্রি স্টাইলের ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিলে তা দেখে জোহান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানতে চান ফ্রি স্টাইলে দক্ষ হওয়ার উপায়। মুক্তাসীদ জোহানকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা চর্চা করতে বলেন। জোহান পরামর্শমতো ফ্রি স্টাইল চর্চা করতে শুরু করেন জোরেশোরে।

এ বছর ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ জোহান একটি ভিডিও দেখেন। ভিডিওটি ছিল ইন্ডিয়ান ফ্রি স্টাইলার আরচিস পাটেলের। ভিডিওতে দেখেন, আরচিস পাটেল ক্রমাগত মাথার একপাশ থেকে অন্যপাশে ফুটবল নিচ্ছেন ১ মিনিটে ১০১ বার। এবং এতে অর্থাৎ ‘মোস্ট সাইড হেড স্টলস বল ইন ওয়ান মিনিট’ ক্যাটাগরিতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্থানটি দখল করে আছেন তিনি। ভিডিওটি দেখার পর উল্লসিত হয়ে পড়েন জোহান! কারণ তিনি এক মিনিটে এর চেয়েও বেশিবার মাথার দু’পাশে বল ঘুরাতে সক্ষম। বিষয়টি তিনি ইমেইলের মাধ্যমে জানান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। ১২ সপ্তাহ পর তিনি মেইলের রিপ্লাই পান। তারা টাইমকিপার ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যসহ তার ফ্রি স্টাইলের একটি ভিডিও পাঠাতে বলে। ২২ মে জোহান তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি ভিডিও পাঠিয়ে দেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। ভিডিওটি পাঠানোর পর অপেক্ষা। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১২ সপ্তাহ পর গিনেস কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘মোস্ট সাইড হেড স্টলস বল ইন ওয়ান মিনিট’ ক্যাটাগরিতে পূর্বের রেকর্ডধারী আরচিস পাটেলকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ডধারীতে পরিণত হয়েছেন তিনি। জোহান এক মিনিটে মাথার দুপাশে বল ঘোরাতে সক্ষম হয়েছিলেন ১০৪ বার।

সাফল্যের ব্যাপারে জোহান আগে থেকে নিশ্চিত হলেও বাবা-মা কেউই বিশ্বাস করেননি তার কথা। পরবর্তী সময়ে সেপ্টেম্বরের ০৯ তারিখ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে সার্টিফিকেট পেলে আনন্দে উল্লসিত হয়ে পড়ে পুরো পরিবার! কারণ একজন ফ্রি স্টাইলার হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোহান পেয়েছিলেন পরিবার থেকেই। বন্ধু-বান্ধবরাও বিভিন্ন সময়ে তাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছিল।

জোহানের শৈশব কেটেছে চট্টগ্রাম শহরে। ২০১৬ সালে রেডিয়ান্ট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ২০১৮ সালে চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন তিনি। ভবিষ্যতে বিবিএ পড়ার ইচ্ছা আছে তার। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল ফ্রি স্টাইলের চর্চাটা চালিয়ে যেতে চান জোহান। স্বপ্ন দেখেন ওয়ার্ল্ড ফুটবল ফ্রি স্টাইলের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ‘সুপারবল’-এ অংশগ্রহণ করার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads