• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
যমুনার পানি বেড়ে জামালপুর বগুড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

যমুনার বেড়ে যাওয়া পানিতে বগুড়ার সদর ইউনিয়নের চর বাটিয়া গ্রামের একটি বাড়ি

ছবি - বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

যমুনার পানি বেড়ে জামালপুর বগুড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি গত কয়েক দিন ধরে বাড়ছে। এতে গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে তলিয়ে গেছে জামালপুর ও বগুড়া জেলার নিম্নাঞ্চল। গাইবান্ধা শহরের ঘাঘট নদ, গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া ও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়েছে।

এদিকে দেশের নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি ও কমার কারণে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে গতকাল দুটি কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। জরুরি পরিস্থিতিতে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য ৯৫৭৬৭৭৫, ০১৭৪৮-৩৯৭৬৯৩ অথবা ৯৫৫৩১১৮, ৯৫৫০৭৫৫, ৯৫৫৭৩৮৬, ০১৭১৫০৪০১৪৪ নম্বরে কল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

পানি উন্নন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল বাংলাদেশের খবরকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের নদ-নদীগুলোর মোট ৯৪টি পয়েন্টের মধ্যে ৩৩টিতে পানি বেড়েছে, কমেছে ৫০টিতে। বাকি পয়েন্টগুলোতে পানি আগের মতোই ছিল।

আমাদের জামালপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যমুনার পানি বেড়ে ইসলামপুর উপজেলার চার ইউনিয়ন ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেওয়ানপাড়া, ডেবরা পেইচ, পূর্ব বলিয়াদহ, পশ্চিম বলিয়াদহ, শিংভাঙ্গা, ধর্মকুড়া, চিনাডুলি, বমনা, বড়াইলপাড়া, কুলকান্দিসহ এলাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষজন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত চিনাডুলি, পার্থশি, নোয়ারপাড়া ও কুলকান্দি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ফসলহানির আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছে এখানকার কৃষক।

এদিকে পশ্চিম চিনাডুলি গ্রামে যমুনার পানির তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৪৫ বছর বয়সি শিক্ষক শামসুদ্দিন ও কৃষক আব্বাস আলী জানান, আমাদের ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভাঙনের মুখে বিলীন হয়েছে। গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কৃষি অফিসের বরাত দিয়ে বগুড়া প্রতিনিধি জানান, চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও সদর ইউনিয়নে বন্যায় দুই হাজার ৯৬৫ জন কৃষকের ৩৭০ হেক্টর রোপা আমন, ৫০ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা, ২০ হেক্টর আউশ, ১০০ হেক্টর মাসকালাই, ২৫ হেক্টর মরিচসহ ৫৭৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

নদী উপচে ওঠা পানি প্রবেশ করায় সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। সোনাতলা উপজেলা এলাকার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করায় সেখানেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে যমুনা নদীসংলগ্ন ধুনট এলাকার ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।

পাউবো সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় যমুনার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম সাদেক জানান, বন্যার কারণে উপজেলার নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, টেংরাকুড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আবু আবদুল্লাহ দাখিল মাদরাসার ক্লাস অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে ।

বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, পানি আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নাগাদ বাড়তে পারে। এরপর কমতে শুরু করবে। কোথাও নদী ভাঙনের আশঙ্কা নেই।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানিয়েছেন, চর এলাকার কিছু নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করে ফসল নিমজ্জিতসহ কিছু ঘরবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। এসব পরিবারকে ইতোমধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা শহরের ঘাঘট নদ, গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া ও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদ ছাড়া অন্য নদীগুলোর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির চাপে ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব কঞ্চিপাড়ার টিআর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads