• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
হুমকিতে চাঁঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ

ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে পদ্ম-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

হুমকিতে চাঁঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ

  • মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উজান থেকে ধেয়ে আসা বিশাল পানিরাশির চাপে হুমকির মুখে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। প্রমত্ত পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থলে প্রবল  পানিপ্রবাহের সঙ্গে ঘূর্ণিস্রোত তীব্র হয়ে নদীর উত্তাল রুদ্ররূপ এখন আরো ভয়ঙ্কর।

শহর রক্ষা বাঁধের মোলহেডে নদীর গভীরতা ৭৫-৮০ মিটার অর্থাৎ ২৪০ ফুট। স্রোতের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮-৯ নটিক্যাল মাইল। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ পানি চাঁদপুর মেঘনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। এ কারণে চাঁদপুরের তিন নদীর প্রবহমান পানিরাশিকে ‘সাগর’ বলছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চাঁদপুরে কর্মরত প্রকৌশলীদের মতে, প্রতিদিনই উজানের পানির চাপ বাড়ছে। শহর রক্ষা বাঁধে বিপদসীমার কাছ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ চাপ অব্যাহত থাকলে শেষ পর্যন্ত কী হয় বলা যায় না। কোনো কারণে শহর রক্ষা বাঁধের নতুনবাজার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দু-তিন দিনের মধ্যে পুরো চাঁদপুর শহর ধ্বংসলীলায় পরিণত হবে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েকবার শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার অংশে আঘাত করেছে মেঘনা। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার ব্লক নদীতে দেবে গেছে। ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কিছু বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়।

ভাঙন রোধে শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার অংশের হরিসভা এলাকায় দুই হাজার ৮৮০ বস্তা বালিভর্তি জিও ব্যাগ এবং ছয় হাজার ৬১৫ পিস সিসি ব্লক ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। এ তথ্য জানান শহর রক্ষা বাঁধের (পুরানবাজার) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশ্রাফুজ্জামান। নদী ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল।

পাউবো সূত্র জানায়, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের দৈর্ঘ্য ৩৩৬০ মিটার। ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধে ব্যয় হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। দীর্ঘ ৩৯ বছরে ওই টাকা সরকার বরাদ্দ দেওয়া বিভিন্ন কিস্তিতে। ফলে কাজটি অতটা টেকসই হয়নি।

এদিকে গত বর্ষা মৌসুমেও শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার অংশে আঘাত করেছিল মেঘনা। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে চাঁদপুর পাউবো সংস্কারকাজে সিসি ব্লক বসানোর জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি। প্রস্তাব ছিল শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ২০০ মিটার এলাকা ব্লক দিয়ে সিল করে দেওয়ার। স্টকে থাকা ৪০ হাজার সিসি ব্লক এ কাজে ব্যবহার করা হবে। নতুন করে ৪০ হাজার ব্লক তৈরি খাতে ২০ কোটি টাকার ব্যয় করতে হবে।

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, চাঁদপুরবাসীর জন্য বড় ধরনের দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। এর থেকে উত্তরণে গত দুই মাস আগে ১৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নকশা অনুমোদন করেছে পাউবো। একনেক বৈঠকে প্রকল্প অনুমোদিত হলে শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শহর রক্ষা বাঁধের (পুরানবাজার) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশ্রাফুজ্জামান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও নদী বিরূপ আচরণ করছে। তা ছাড়া নদীর পাড় থেকে ৫০০ মিটার দূরে ডুবোচর জেগে উঠেছে। এ কারণে পানি স্বাভাবিক গতিতে ভাটিতে না যেয়ে কূলঘেঁষে উল্টো উজানের দিকে আসছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিস্রোত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, বর্ষা মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিস্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে নদীর গভীরতা প্রায় ১২০ ফুট। স্কাউরিং বেশি হওয়ায় ৬০ মিটার ব্লকবাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো জানান, উজানের পানির চাপ ক্রমেই বাড়ছে। কী হয় বলা যায় না। এককথায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে।

তিনি আরো জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষায় নতুন প্রকল্প, আগে শেষ হওয়া কাজের মেন্টেনেইজ এবং আপদকালীন ব্যবস্থাসহ সব ধরনের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি।

এই প্রকৌশলী বলেন, সাখুয়ায় নদী ভাঙন রোধে ব্লক ফেলানোর কাজ চলছে সেখান থেকে ব্লক এনে চাঁদপুর শহরকে জোড়াতালি দিয়ে রক্ষা করার কাজ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও বরাদ্দ পেলেই চাঁদপুর শহরকে রক্ষায় বড় ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি জানেন মন্তব্য করে আবু রায়হান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সঠিক সময়ে বরাদ্দ না মিললে চাঁদপুর থেকে আমার পালিয়ে যেতে হবে। কারণ পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads