• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মৃত হাজতি ও প্রবাসীরা আসামি

আশুগঞ্জে কোনো ঘটনা ছাড়াই মামলা

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

আশুগঞ্জে কোনো ঘটনা ছাড়াই মামলা

মৃত হাজতি ও প্রবাসীরা আসামি

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ঘটনা ছাড়াই মৃত, হাজতি ও প্রবাসীসহ ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানায় একটি ভুতুড়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকেও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, হত্যা পরিকল্পনা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়। আশুগঞ্জ থানার এসআই সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলায় ইতোমধ্যে জামায়াতের রোকন মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা শফিউল আলম ফরিদকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা ও জেলা জুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। তবে মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে থানা কর্তৃপক্ষ। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে সোনারামপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটান। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলে জোটকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এমন ৭৭ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন এসআই সুদীপ্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে মামলায় উল্লিখিত তারিখ ও সময়ে আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০-দলীয় জোটের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। মহাসড়কের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওইদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সড়ক অবরোধও করা হয়নি।

ওই মামলার এজাহারের ২ নম্বর আসামি হিসেবে উপজেলার খড়িয়ালা গ্রামের মৃত মৌলভী হাসান আলীর ছেলে কাইয়ুম চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট মারা গেছেন। মৃত কাইয়ুমের স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, তিন বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। তার নাম আসামির তালিকায় দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশের এই কর্মকাণ্ডে আমার পরিবারের সদস্যরা মর্মাহত হয়েছেন।

১১ নম্বর আসামি চরলালপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে আলীম গত এক বছর ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা। মামলার ১৫ নম্বর আসামি চরচারতলা গ্রামের মৃত কাদির মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন অন্য একটি মামলায় তিন মাস ধরে জেলহাজতে রয়েছেন। মামলার ৪৭ নম্বর আসামি মৃত আবদুল কাদির মাস্টারের ছেলে এনামুল হক মামলায় উল্লিখিত তারিখ ও সময়ে তার কর্মস্থল আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন বলে কোম্পানি সূত্র নিশ্চিত করেছে। মামলার ঘটনার তারিখ ও সময়ে ৫৪ নম্বর আসামি উপজেলার লালপুরের হাফিজুর রহমান বাবুলের বাবা ইন্তেকাল করায় তিনি বাবার লাশ দাফন কাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ জানান, তিনি মামলায় উল্লিখিত তারিখ ও সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ছিলেন। এদিন আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০-দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচি ছিল না।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু বলেন, মামলায় উল্লিখিত ঘটনার দিন ও সময়ে আশুগঞ্জে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল না। মহাসড়ক অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি থাকলে স্থানীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা অবশ্যই জানতেন।

আশুগঞ্জ থানার ওসি মো. বদরুল আলম তালুকদার বলেন, কোনো ঘটনা ছাড়া তো আর মামলা হয়নি। তবে মামলায় মৃত কোনো ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি। অন্য কোনো আসামির নামের ব্যাপারে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads