• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শামুক ভেঙে সংসার চলে

সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য নারীরা শামুক ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত

আজব খবর

শামুক ভেঙে সংসার চলে

  • এস এম হালিম মন্টু, নড়াইল
  • প্রকাশিত ১৫ অক্টোবর ২০১৮

নড়াইলের একাধিক উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩ হাজার নারী সংসারের সচ্ছলতা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে বছরে কমপক্ষে তিন মাস চিংড়ি মাছের খাবারের জন্য শামুক ভাঙার কাজ করেন। এ কাজে তাদেরকে শামুকের ভেতর থেকে মাংস বের করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব নারী সংসারের কাজের অবসরে বাড়তি আয়ের জন্য প্রতিদিন ৫০ কেজি ওজনের ২ বস্তা শামুক ভাঙার কাজ করে আসছেন।

এ কাজে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বস্তা শামুক ভাঙার জন্য চিংড়িঘের মালিক তাদেরকে ৮০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। এ হিসাবে গড়ে প্রত্যেক নারীকর্মী দৈনিক ১৬০ টাকা হারে তিন মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা করে আয় করে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রতি বছর আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চিংড়িঘের মালিকরা তাদের ঘেরে থাকা চিংড়িগুলোকে শামুকের মাংস খেতে দেয়। আর ঘের মালিকদেরকে শামুক ভাঙার কাজে স্থানীয় এসব নারীর ওপর নির্ভর করতে হয়। স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসারের সচ্ছলতার জন্য সংসারের কাজের ফাঁকে এ কাজ করে লাভবান হয়ে আসছেন।

নড়াইলের সীতারামপুর গ্রামের তপতি রায় বলেন, স্বামীর আয় কম। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। তাদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে স্বামীর কষ্ট হয়। তাই আমি সংসারের কাজ শেষে শামুক ভাঙার কাজ করি। প্রতিদিন আমি ২ বস্তা শামুক ভেঙে ১৬০ টাকা পাই। এ টাকা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করি।

একই এলাকার অনিতা বিশ্বাস ও রিতা জানান, সংসারে অভাব আছে বলেই এ কাজ করি। প্রায় ১০ বছর ধরে এ কাজ করছি। প্রতি বছর বাংলা ভাদ্র মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত- এ তিন মাস শামুক ভাঙার কাজ করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। এ টাকা সংসারের উন্নয়ন ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করি। এ কাজ করতে এসে সংসারের কাজে কোনো সমস্যা হয় না। তবে প্রতি বস্তা শামুক ভাঙার জন্য ১০০ টাকা করে হলে ভালো হয়। এ এলাকার আমরা ৩০-৩৫ জন সক্রিয়ভাবে এ কাজে জড়িত আছি। চিংড়িঘের মালিক মাহফুজুর রহমান বলেন, চিংড়ি মাছকে খাওয়ানোর জন্য তিন মাস শামুকের মাংস ব্যবহার করা হয়। প্রতি বস্তা শামুক কিনতে হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, আর ভাঙাতে খরচ হয় ৮০ টাকা। তার মানে, গড়ে প্রতি বস্তা শামুকের পেছনে ব্যয় হয় ৪০০ টাকা করে। তবে শামুক ভাঙার কাজে যারা সময় দেন তারা অবসর সময়েই এটা করে থাকেন। সংসারের উন্নয়ন ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই স্থানীয় প্রায় ৩ হাজার নারী এ কাজ করে থাকেন। এ কাজের মাধ্যমে তারা চিংড়ি উৎপাদনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে আছেন। এককথায়, তাদের শ্রম এখানকার চিংড়ি উৎপাদনে বড় অবদান রাখছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads