• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

শীত মৌসুমের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগৃহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নওগাাঁর আত্রাইয়ের গাছিরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

  • নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৮

নওগাঁর আত্রাইয়ে একসময় মাঠ আর সড়কের দু’পাশে সারি সারি খেজুর গাছ চোখে পড়ত। কিন্তু কালের আবর্তে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আত্রাইয়ের গাছিরা। ছয় ঋতুর বাংলাদেশে হেমন্ত ঋতুতেই প্রকৃতিতে পা ফেলতে শুরু করে শীত ঋতু। আর শীতে পাওয়া যায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এই রস খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীত আগমনের শুরু থেকেই খেজুরের রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন গাছিরা। বেড়েছে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা আত্রাইয়ের গ্রামগঞ্জের খেজুর গাছের কদর। এখনো শীতের তেমন একটা দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। তবে আগের তুলনায় খেজুর গাছ কম থাকায় গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গাছিরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খেজুরের গাছ বাড়ির আঙিনা, জমির আইল ও পতিত ভূমিতে জন্ম নেয় বেশি। কিন্তু উপজেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ অঞ্চলে দেশি খেজুর গাছ আজ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এক সময় খ্যাতি থাকলেও কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়। খেজুর গাছ সারা বছর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীত মৌসুমে কদর বেড়ে যায়। রস আহরণকারী গাছিদের মধ্যে লক্ষ করা যায় প্রাণচাঞ্চল্য। কারণ বছরের চার মাস খেজুর গাছ থেকে গুড় ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়। যত বেশি শীত পড়ে, তত বেশি মিষ্টি রস দেয় খেজুর গাছ। একটি খেজুর গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাদু ও মানবদেহের জন্য উপকারী হওয়ায় মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয়। একসময় শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে গ্রামে ছুটে আসত খেজুর রস খেতে। সে সময় সকাল ও সন্ধ্যায় গ্রামীণ পরিবেশ খেজুরের রসে মধুর হয়ে উঠত। আজো শীত মৌসুমজুড়ে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েশ খাওয়ার পালা। খেজুর গাছের রস জ্বাল দিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। এসবের স্বাদ ও ঘ্রাণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এ ব্যাপারে পুকুরপাড়া গ্রামের মতিন বলেন, বছরে শীত মৌসুমে পাঁচ মাস খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এই রস থেকে বিভিন্ন ধরনের পাটালি ও লালি গুড় তৈরির পর বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। তবে বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে হয়তো-বা একসময় আমাদের এলাকায় খেজুর গাছের দেখাই মিলবে না। হাজার বছরের এ ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখার লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যেকের এগিয়ে আসা উচিত।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না এবং এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচও করতে হয় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads