• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর ৯ বছরেও চালু হয়নি

অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর ৯ বছরেও চালু হয়নি

  • আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০১৮

লতাপাতা উঁকি দিচ্ছে ভবনের জানালা দিয়ে। সর্বত্র ঝুলছে মাকড়সার জাল। ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। সামনের ফুলের বাগানে হরেকরকম ফুল ফুটলেও লতাপাতা ও আগাছা ঢেকে রেখেছে ফুলের সৌন্দর্য। সীমানা প্রাচীরও ঢেকে গেছে লতাপাতায়। এভাবেই ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি উদ্বোধনের পর থেকে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীরে ভবন নির্মাণের পর জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের দেখার জন্য এখানে কোনো সরঞ্জাম রাখা হয়নি। তাছাড়া পরিচর্যার জন্য স্থায়ীভাবে কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় পুরো জাদুঘরটির ভেতর-বাহির অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।

ভবনটিতে বিশাল লাইব্রেরি কক্ষ, কেয়ারটেকার কক্ষ, ওয়েটিং কক্ষ, পাঁচটি কক্ষসহ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক বাথরুম রয়েছে। ভবনের সুনিপুণ কারুকার্য যে কাউকে আকর্ষণ করে। তবে জাদুঘরটি এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এলেও তাদের নিরাশ হয়ে চলে যেতে হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ’৫২-এর পাঁচ ভাষাসৈনিক ও ’৭১-এর সাত শহীদ বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরিকল্পনামাফিক ২০০৭ সালের জুন মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে মহান এই বীরদের জন্মভূমিতে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর পৈতৃক নিবাস ওসমানীনগরের দয়ামীর বাজার সংলগ্ন ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।

২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘর ভবনের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৮১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৫৩৫ বর্গফুটের একতলা ভবনের নির্মাণকাজ ২০০৯ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালের জুলাই মাসে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। ওসমানীর স্মৃতি রক্ষায় ১৯৮৪ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার ওসমানীর পৈতৃক নিবাস দয়ামীরে একটি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ডায়াবেটিস সেন্টার, মাতৃমঙ্গলসহ ৫০ শয্যার হাসপাতাল, শিক্ষা ফাউন্ডেশনসহ লাইব্রেরির সমন্বয়ে কমপ্লেক্সটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এ জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় ১ একর জমি সরকারের নামে দান করেন। ১৯৮৪ সালের ২৬ আগস্ট তৎকালীন সরকারের উপ-আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক (উপ-অঞ্চল-১৪) ব্রিগেডিয়ার এমজি রব্বানী কমপ্লেক্সটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পুনরায় কমপ্লেক্সটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সে সময় প্রশাসন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর কমপ্লেক্সটি দীর্ঘদিনে আর চালু হয়নি।  একসময় ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ভবনের সামনের খালি জায়গা পরিণত হয় গোচারণ ভূমিতে। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবশেষে দুই বছরের বেশি সময়ের ব্যবধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে ‘ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে’র উদ্বোধন করা হয় ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে এই একতলা বিশিষ্ট ভবনটি। ২০১২ সালে সৌন্দর্য বর্ধনে ভবনের সামনে বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ লাগানো হয়। মহাসড়ক থেকে ভবনের সৌন্দর্য দেখে যে কেউ আকর্ষিত হলেও ভবনটির সামনের কোনো অংশে ওসমানীর নামচিহ্নটুকুও এখন পর্যন্ত লেখা হয়নি। ফলে বোঝার উপায় নেই ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে এই জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে।  এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসমানীর ভ্রাতুষ্পুত্র টিটু ওসমানী বলেন, দেরিতে হলেও ওসমানীর নিজ গ্রামে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে এটি আর চালু করা হয়নি।  ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু আলা জুবায়ের আহমদ শাহীন বলেন, মাঝে মধ্যে আমি ভবনের ভেতর নিজ খরচে পরিষ্কার করাই। দীর্ঘদিনেও প্রতিষ্ঠানটি চালু না হওয়ায় আমরা খুবই হতাশ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads