• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
বাঁশের সাঁকোই হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন ও ফদিপুর সদর উপজেলার ইশানগোপালপুর ইউনিয়নের সীমান্তে সাহাজাদ্দিন মাতুব্বার পাড়া আনন্দ বাজারের পাশে বেরিবাঁধ সংলগ্ন খালের উপরের এই বাঁশের সাঁকো

গোয়ালন্দ প্রতিনিধির তোলা ছবি

সারা দেশ

বাঁশের সাঁকোই হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০১৮

কুদ্দুস আলম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন ও ফরিদপুর সদর উপজেলার ইশানগোপালপুর ইউনিয়নের সীমান্তে সাহাজাদ্দিন মাতুব্বার পাড়া আনন্দ বাজারের পাশে বেরিবাঁধ সংলগ্ন খালের উপরে একটি পাকা ব্রিজ না থাকায় নরবরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় অন্তত ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও হাজার হাজার মানুষ। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ওই স্থানে একটি ব্রীজের। কিন্তু এখনো তা পুরন হয়নি। এলাকাবাসীর প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে দুই বছর আগে উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেখানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরী করে দিয়েছে। সেই সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। এলাকাবাসীর ধারনা দুই জেলার সিমান্ত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে না ব্রীজ। আর এ জন্যই বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই এলাকার মানুষকে।

সরেজমিন স্থানীয়রা জানান, শুধু মাত্র এই একটি ব্রীজের জন্য বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। বিকল্প পথে বাজারে আনতে অন্তত ৭/৮ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। এতে পরিবহন ব্যায় অনেক বেড়ে যায়। সাঁকোটির দুই পাশেই পাঁকা সড়ক রয়েছে। অথচ একটি ব্রীজ নেই। এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে। অনেক সময়ই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও পথাচারী দুর্ঘটনার শিকার হন।

হারুন মীর, কাউছার হোসেনসহ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, এখানে দীর্ঘদিন খেয়া নৌকায় মানুষ পারাপার হতো। গত ইউপি নির্বাচনের পর উজানচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকির বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করে দেয়। কিছুদিন পরপর সাঁকোটি সংস্কার করতে হয়। সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন জামতলা হাইস্কুল, সাহাজদ্দিন মাতুব্বার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ উজানচর আলিয়া মাদ্রাসা, মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসা, সাহাজদ্দিন মন্ডল ইন্সটিটিউট, আনন্দবাজার মডেল কিন্ডার গার্টেনসহ ৬/৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে। অনেক সময় বাঁশ দুর্বল হয়ে গেলে বা অসাবধানতাবশত চলাচলকারীদের বাঁশের ফাঁকা দিয়ে পা চলে গেলে বাঁশ কেটে উদ্ধার করতে হয়। এ ধরনের দূর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তারা জানান, দুই জেলার সীমান্ত হওয়ায় এ এলাকার মানুষ দিনের পর দিন অবহেলিত থেকে পোহাচ্ছে দূর্ভোগ। এলাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য পরিবহনে পড়তে হয় বিপাকে। বিস্তৃর্ণ এ চলাঞ্চলে কৃষির বড় ফলন হয়ে থাকে ধান, পাট ও সবজির। এসব পারাপারে এলাকার কৃষকরা দুর্ভোগ পোহানোর পাশাপাশি পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সাথে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যেতে হয় কয়েকশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের।

মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার, কাকলী আক্তার, আঙ্গুরী খাতুন আলাপকালে জানায়, এই সাঁকো পারাপারের কথা মনে হলে মাদ্রাসায় যেতে মন চায় না। দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু এ রকম একটি গুরুত্বপুর্ণ স্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে আমাদের আসা-যাওয়া করতে হয় ভাবতেই অবাক লাগে। এসময় দ্রুত সময়ের মধ্যে এই স্থানে একটি ব্রীজের দাবি জানায় তারা।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফকির জানান, আনন্দ বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশের এই ব্রীজটির জন্য ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। এলাকাবাসীর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তিনি ব্যাক্তি উদ্যোগে ওখানে অনেক টাকা খরচ করে একটি সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছেন। তবে সেটা কয়েকদিন পরপরই মেরামত করতে হয়। ইতিমধ্যে তিনি জনগণের এই অসুবিধার কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীকে জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে একটি সেতু নির্মাণের কথা দিয়েছেন। আশাকরি নির্মিত সাঁকোটি আর মেরামত করতে হবে না। তার আগেই এলাকাবাসী সেতুদিয়ে চলাচল করতে পারবে।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম জানান, গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ওই সেতুটির নকশার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে নকশা অনুযায়ী বাজেট প্রস্তুতের কাজ চলছে। বাজেটের কাজ শেষ করে সেতুটির দরপত্র আহবান করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads