• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
গোপালগঞ্জে হাসছে লাল শাপলা!

গোপালগঞ্জের লাল শাপলা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

গোপালগঞ্জে হাসছে লাল শাপলা

  • গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০১৮

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে। জেলার এসব বিলে সবুজ পাতার মধ্যে ফুঁটে থাকা লাল শাপলা দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন লাল-সবুজের পতাকা। প্রাকৃতিক এ সৌন্দয্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে বিলগুলো দেখতে আসছেন পর্যটকরা। এসব স্থানে মৌসুমী পর্যাটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী সৌন্দয্য পিপাসুদের। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা পেলে বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে এসব শাপলার বিল।

জেলার বিভিন্ন বিলে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ব দিকে উদিত হচ্ছে সোনালী আভা ছড়ানো লাল সূর্য। আর সূর্যের সোনালী আভার সাথে সাথে নিজেদের মেলে ধরছে লাল শাপলা। এ যেন এক অপরূপ দৃশ্য। শীতের শিশিরে ভেজা লাল শাপলা ভোরের লাল সূর্যের সোনালী আভার সাথে মিলে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে।

‘বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রুপের যেন নেইকো শেষ’-এ গানের লাইনটির সৌন্দর্য্য বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দির বিল, জোয়ারিয়ার বিলসহ অন্ততঃ ২৫টি বিলে ফুটে থাকা অসংখ্য লাল শাপলা। বিলের যেদিকেই চোখ যাবে মনে হয় পাতা রয়েছে লাল গালিচা। তবে অনেক বছর আগে এসব বিলের জমিতে সাদা-সবুজ শাপলা জন্ম নিলেও বিগত ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে শুরু হয় লাল শাপলা। চারিদিক লালে লালে একাকার হয়ে যায়।

এসব বিল সাধারনত এক ফসলি জমি। এসব বিলে বোরো মৌসুমেই শুধুমাত্র ধান চাষ করেন কৃষকেরা। এরপর জমিতে বর্ষার পানি এসে যায়। সেখানেই প্রতিবছর প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় লাল শাপলা।

এ লাল শাপলার অপরূর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বিলগুলোতে প্রতিনিয়ত ভীড় করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের দর্শনার্থীরা। এ দৃশ্য এক অভুতপূর্ব। নৌকায় করে বিলগুলোতে ঘুরে উপভোগ করেছের সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্য মন ও প্রাণ ভরিয়ে দেয় আগত পর্যটকদের।

শুধু সৌন্দর্যই নয় বিলগুলো বছরের ৬ মাস তলিয়ে থাকায় কোনো কাজ থাকে না এলাকাবাসীর। ফলে এ মৌসুমে আগত পর্যটকদের নৌকায় করে বিলে ঘুরিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে চালাচ্ছেন সংসার। এছাড়া এই শাপলা বিক্রি হচ্ছে সবজি হিসেবে। এলাকার ছেলে-যবুক সময় পেলেই নৌকায় করে বাড়ীতে তুলে নিয়ে যায় লাল শাপলা।

এদিকে, দর্শানার্থীদের সুবিধার্থে কোটালীপাড়ার কান্দির বিলে মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সম্প্রতি শাপলালয়ের উদ্বোধন করা হয়। গোপালগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার এ শাপলালয়ের উদ্বোধন করেন। কান্দি ইউনিয়নভুক্ত শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন লাল শাপলার বিল পর্যটকদের জন্য বিল দিয়ে চলাচলের জন্য কয়েকটি নৌকা, শাপলা মাচাং ও ঘাটলাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে শাপলালয় করা হয়।

এ সময় ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা, জেলা পরিষদ সদস্য রিনা মন্ডল, ইউপি চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ, শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ ভাবুক, সহযোগী অধ্যাপক মিন্টু রায় উপস্থিত ছিলেন।

বিলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বিভিন্ন বিলে ফুঁটে রয়েছে অসংখ্য লাল শাপলা। এ দৃশ্য বিলের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে আসলে মন ভরে যায়। এ যেন বাংলাদেশের এক অপূর্ব দৃশ্য। এ দৃশ্য উপভোগ করতে আসা উচিত ভ্রমন পিপাসুদের।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়েনর চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের পেটের ক্ষুধা মিটেছে, এখন দরকার মনের ক্ষুদা মিটানো। কান্দি ইউনিয়নের সর্বত্রই লাল শাপলায় ভরে রয়েছে। মনের ক্ষুদা মেটানোর জন্য ভ্রমন পিপাসুদের এসব বিলে বেড়াতে আসার প্রয়োজন’।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এস.এম মাহফুজুর রহমান জানান, টুঙ্গিপাড়ায় জাতিরজনকের সমাধী সৌধ, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্তের বাড়ি ছাড়াও টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার বিভিন্ন বিলে লাল শাপলা, পদ্ম ফুলের বিল রয়েছে। এসব অপরুপ দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্য পর্যটকদের আসা উচিত।

তিনি আরো বলেন, বিলগুলোতে এসে যাতে পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিলগুলোর পাশে বসার বব্যস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া লাল শাপলার সৌন্দর্য যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে। সাথে দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। যাতে তারা লাল শপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads