• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পার্বতীপুরে সরকারী হাসপাতাল ডাক্তার শূন্য

হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

পার্বতীপুরে সরকারী হাসপাতাল ডাক্তার শূন্য

  • সোহেল সানী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০১৮

প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একমাত্র সরকারী হাসপাতাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্সে এখন মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ এখানে থাকার কথা ৩৪ জন ডাক্তার। এখানে সর্বশেষ কর্মরত দুই ডাক্তারের মধ্যে দুই মাস আগে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ রায়হান আলী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন। গত ৭ নভেম্বর  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্ত ডাঃ শহীদুজ্জামান বদলি হয়ে রংপুর ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইএসটি) সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করলে ডাক্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় এক। এরও আগে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আনোয়ার আজিম বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। আমবাড়ী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাঃ রেবেকা রাজ্জাক ২০১২ সাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। ২০১৫ সালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো-সার্জারী বিভাগ), ইএনটি বিভাগের কনসালটেন্ট, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট, ২০১৬ সালে প্যাথলজিষ্ট ডাঃ আসমা হক, ডেন্টাল সার্জন ডাঃ আতিয়া হাসিন, ২০১৭ সালে জরুরী বিভাগের ডাঃ আশরাফি আহম্মেদ, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাসরিন জাহান, শিশু বিভোগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এখান থেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। ডাঃ আবদুল­া আল মোমেন পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স হাসপাতালে পোষ্টিং হলেও তিনি সেখানে যোগদান না করে প্রেষনে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। এদিকে, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানকার সার্জিক্যাল বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ ও এ্যানেেথসিয়া বিভাগে কনসালটেন্ট পদে কখনো কোনো ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এভাবে পার্বতীপুরের একমাত্র সরকারী হাসপাতালটি ডাক্তার শূন্য হয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ছাড়াও পার্বতীপুরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৮ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৫ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে। হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জিক্যাল), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেওলজিষ্ট), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), ফামাসিষ্ট, হিসাব রক্ষক, নার্সিং সুপারভাইজার, মেডিকেল টেকনিক্যাল (রেডিও), মেডিকেল টেকনিক্যাল (ফিজিও), কার্ডিওগ্রাফারসহ হাসপাতালের দুটি (স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা)  বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনির গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সহকারীর ১৪৩ টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শুন্য পড়ে আছে। এতে সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এদিকে, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে ২শ’ রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। খোলা থাকে জরুরি বিভাগ। ডাক্তার সংকটে বন্ধ অপারেশন থিয়েটার। প্রায় বছরেও বেশী সময় ধরে বিকল একমাত্র এক্স-রে মেশিন।

অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসা কর্মরতরা নির্দ্ধারিত সময়ে হাসপাতালে হাজিরা দিলেও তাদের অনেকে হাসপাতালে না থেকে শহরে প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মোস্তফা কামাল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সাধারন গরিব মানুষরা অন্য কোথাও যেতে পারি না বলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসি। ডাক্তারের অভাবে আমরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি না’।

হাসপাতালের বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘দিনাজপুরের সব উপজেলা হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট রয়েছে, কোথাও দুই-তিনজনের বেশি ডাক্তার নেই। এসব বিষয নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠিপত্র দেওয়া হয়েছে। আশাকরি শীঘ্রই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে’। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads