• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নওগাঁয় খেঁজুর রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

গুড় তৈরী করছেন গাছিরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

নওগাঁয় খেঁজুর রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

  • নওগাঁ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০১৮

শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। শীত এলেই অনেকটাই পাল্টে যায় গ্রাম-বাংলার চিত্রপট। শুরু হয় শীতের মৌসুমে ঐতিহ্যবাহি পিঠা-পুলির উৎসব আর খেঁজুর গাছের রস থেকে তৈরি সুস্বাদু পাটালী গুড়। এই পাটালী গুড়ের চাহিদা শুধু বাংলাদেশেই নয় রয়েছে বিদেশেও। ইতিমধ্যেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। বেলা গড়লেই খেঁজুর গাছে চড়ে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ পরিস্কারসহ হাঁড়ি বাধার কাজ শুরু করে। সূর্যাস্তের আগেই গাছে হাঁড়ি লাগানো শেষ করে। রাত শেষে হাঁড়িতে যে পরিমাণ রস সংগ্রহ হয় সেই রস আবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত নামাতে ব্যস্ত থাকে গাছিরা। সমস্ত রস বিশেষভাবে তৈরি করে নেয়া একটি ষ্টীলের বড় কড়ায়ে জ্বাল করে সুস্বাদু গুড় তৈরি করছে। পুরোদমে মৌসুম শুরু না হওয়ায় বেচা-কেনা তেমন একটা জমে উঠেনি এমনটাই বলছে গাছিরা।

দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেকটা আগে থেকেই শীত নামে। শীত নামার সাথে সাথে নওগাঁর রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা, ধামরইহাট, বদলগাছি ও মহাদেবপুর উপজেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন জেলা থেকে গাছিদের আগমন ঘটে। গাছিরা খেঁজুর গাছ প্রতি টাকা বা গুড় দেয়ার চুক্তিতে খেঁজুর রস সংগ্রহ ও পাটালী গুড় তৈরি করে। খেঁজুর রস দিয়ে স্থানীয় গাছিরা নালি গুড়ও তৈরী করে। এই নালি গুড়ের খুবই চাহিদাও রয়েছে। খেঁজুরের পাটালী গুড় বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। নালি গুড় বিক্রি হয় ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নালি ও পাটালী গুড় তৈরির পর্ব চলবে প্রায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। খেঁজুর রস ও গুড়ের জন্য রাণীনগর উপজেলার এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেঁজুরের রস ও গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝারের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেঁজুর গাছ। কোনো পরিচর্চা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এইসব খেঁজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুর পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেঁজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার রাহুগ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেঁজুর গাছ বিলুপ্তি পথে।

নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা থেকে আসা গাছিয়া রফিকুল ইসলাম ও তার সহকর্মীরা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রায় প্রতি বছরেই রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর, দূর্গাপুর ও কুজাইল এলাকায় তাবু গেড়ে ওই এলাকার খেঁজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে ৪ মাসের জন্য গাছভেদে ৫ থেকে ৭ কেজি করে খেঁজুরের গুড় দিয়ে গাছগুলো আমরা নেই। চাহিদা মত খেঁজুর গাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় আশানুরুপ গুড় তৈরি করা যায় না। যার কারণে তেমন পোষায় না। তারপরও এ বছর প্রায় ১ শ’ ৬০টির মত খেঁজুর গাছের মালিকদের সাথে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশািই ধরে রেখেছেন। তবে যেভাবে খেঁজুর গাছ কাটা হচ্ছে তাতে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় আর তাদের ব্যবসা হবে না। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা-নেওয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেঁজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় তাদের লাভ একটু বেশি হয়। যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারে না। তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা’।

বর্তমান বাজারে আখের গুড়, চিনির যে মূল্যে বেচা-কেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পূর্ন খেঁজুরের গুড়ের দাম এ বছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছেন গাছিরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads