• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
আত্মগোপনে সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা

সিলেট ম্যাপ

সারা দেশ

আত্মগোপনে সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা

  • সিলেট ব্যুরো
  • প্রকাশিত ০৮ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন মামলার কারণে সিলেট বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থেকেই অনেকে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। নির্বাচনের পর দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও ১২টি মামলা হয়েছে। তাই আরও কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন। পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতেই এই পন্থা অবলম্বন করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জামিনে থাকার পরও তারা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই আত্মগোপনের থেকে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে কৌশলে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। নতুন পুরাতন মামলার কারণে দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে এখনো আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও পরিবার পরিজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে কৌশলে।

জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত গায়েবি মামলা হচ্ছে। এই গায়েবি মামলা শুরু হয়েছিল সিটি নির্বাচন থেকে। এসব মামলার জামিন হলেও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বাসা বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। তাই কৌশলে চলাফেরা করতে হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, অপরাধ না করেও আমরা অপরাধী। যে মামলাগুলো হয়েছে তার মধ্যে ৪০ ভাগ মামলার ২০ ভাগ মানুষই দেশের বাইরে আছেন। বাংলাদেশে অবস্থান না করেও শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করার কারণে মামলা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর কেন্দ্রভিত্তিক মামলা হয়েছে। এমনও হয়েছে যেখানে কোনো সংঘাত, অরাজকতা হয়নি। তারপরও সংঘাতের মামলা দেওয়া হয়েছে। 

সিলেটে-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ের পর কোনো ধরনের আন্দোলন দেখা যায়নি। বিএনপি নেতারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে এখন কর্মসূচি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্রের দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের নির্দেশ এলেই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান ৫ জন কাউন্সিলর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেই সূত্রে একাধিক মামলার আসামি তারা। তাই পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে তাদের। যার ফলে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জনগণ। 

মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘জীবনে যত মামলার আসামি হয়েছি তার একটিতেও আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। রাজনৈতিক কারণে এসব মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি। জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি চার বার। এখন এসব হয়রানির কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। আমার এলাকার জনগনকে তাদের প্রাপ্য সেবা দিতে পারছি না। নির্বাচনের শুরু থেকেই পুলিশি বাধায় প্রচার চালাতে পারিনি। এখনও পুলিশী হয়রানিতে বাসাবাড়িতে টিকা মুশকিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মামলা একটি অনেক বড় হাতিয়ার। আমাদের প্রতিপক্ষ সেই হাতিয়ারই ব্যবহার করছে। এত কিছুর পরও কোনো স্থানীয় ভাবে কর্মসূচী দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ মামলা নামক হাতিয়ার দিয়ে তারা আমাদের আটকে রেখেছেন। এখন জনসম্মুখে আসলে আমদের জেলে যেতে হবে। না হয় পালিয়ে থাকতে হবে। শুধু সিলেট নয় সারা দেশে একই অবস্থা। তাই আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচির নির্দেশের অপেক্ষা করছি।’

জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনের নামে এই তামাশা করার পর নতুন করে সিলেটের ৬টি থানায় ২৫টির ও অধিক মামলা হয়েছে। উপজেলাগুলোতেও মামলা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে যেতে পারছেন না। তাই পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের নেতাকর্মীরা কৌশলে চলাফেরা করছেন।  কোনো মামলা বা গ্রেফতারী পরোয়ানা না থাকলেও আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পুলিশের তো এখন পয়সা ইনকাম করার সময়। তাই তারা দেদারছে হয়রানি করছে সঙ্গে তাদের বানিজ্যও চলছে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রে বাধা দেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরও ১২টি নতুন মামলা হয়েছে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যারা ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ১২টি মামলা হয়েছে।’ মামলা বা ওয়ারেন্ট না থাকার পরও বিএনপি কর্মীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রেফতার ২ ভাবে করা যায়। একটা হল সরাসরি একজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে। অপরটি হল মামলার তদন্তে কারও নাম আসলে তাকেও গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পাদ করা যায়।

বিএনপি সংশ্লিষ্ট যারা এসব অভিযোগ করছেন তা সত্য নয়। আমার বিভিন্ন মামলা তদন্ত করতে গিয়ে যাদের নাম আসছে তাদেরই গ্রেফার করছি। এ ছাড়া ঢালাও ভাবে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করার ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে আমাদের। তাই শুধু মামলা ও তদন্তে প্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads