• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সাতক্ষীরার মধু যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে

সাতক্ষীরায় সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

সাতক্ষীরার মধু যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে

  • কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

সাতক্ষীরার মৌয়ালরা সরিষা ফুলের মধু আহরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি বছর এ জেলা থেকে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর এসব উৎপাদিত মধু ভারত, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করেন মধু চাষিরা।

সরিষা খেতে মধু চাষ করে মৌয়ালরা একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, অন্যদিকে সরিষা চাষিরা সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণের সময় মৌমাছির পরাগায়নের কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাবেন। তাই সরিষা খেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মধু আহরণে আগ্রহী হচ্ছেন মৌয়াল ও সরিষা চাষি উভয়েই। সাতক্ষীরা জেলায় চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আর এসব সরিষা খেতের পাশে বাক্স পদ্ধতিতে সরিষা ফুলের মধু আহরণ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাতক্ষীরার শতাধিক মধু উৎপাদনকারী খামারি এ বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুলের মধু আহরণ করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব খামারে বহু মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সরিষা ফুলের মধু আহরণ করা হয় বলে জানান মধু খামারিরা। 

সাতক্ষীরার মধু খামার মালিক মোশাররফ হোসেন জানান, সাতক্ষীরা জেলায় এ বছর ৫০০ মেট্রিক টন মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিক্রি করে আয় হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর উৎপাদিত এসব মধু ভারত, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, এ জেলায় প্রায় দেড় হাজার মধু খামারি রয়েছেন। যারা সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে মধু আহরণ করে থাকেন। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরিষা ফুলের মধু আহরণ শুরু হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। সরিষা ফুলের মধু আহরণ শেষ হলে শুরু হয় জিরা ও ধনিয়া ফুল থেকে মধু আহরণের মৌসুম। চলে প্রায় দুই মাস। জিরা ও ধনিয়া মৌসুমের পর ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ মৌসুম। অর্থাৎ সারা বছর ধরেই মধু আহরণ কার্যক্রম চলে।

কলারোয়ার মধু চাষি আলফাজ হোসেন জানান, মধু খামারিদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া হলে এই সেক্টর থেকে গার্মেন্ট বা চিংড়ি শিল্পের চেয়ে বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এ ছাড়া মধু চাষিদের দাবি, তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া হলে এই সেক্টর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে। মধু শিল্পে বিপুলসংখ্যক মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে নতুন এক মাত্রা যোগ হবে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আমজাদ হোসেন জানান, সরিষার ফুল থেকে যখন মৌমাছি মধু আহরণ করে তখন পরাগায়নের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সরিষার ফলন ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। সরিষা চাষিদের মধ্যে আগে এ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ছিল, কিন্তু এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। এক সময় সরিষা ফুলের মধু আহরণে সরিষা চাষিরা বিরোধিতা করলেও এখন আর করেন না। কারণ তারা জানেন মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে যখন মধু সংগ্রহ করে তখন পরাগায়ন হয়। ফলে সরিষার ফলন বেশি হয়। বর্তমানে সরিষা চাষিরা বেশি ফলনের আশায় মধু আহরণে সহযোগিতা করছেন। আর এ ব্যাপারে কৃষকদের আরো সচেতন করতে কৃষি কর্মকর্তারা ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন বলে তাদের দাবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads