• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ভৈরবে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

ভৈরবে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

  • ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

ভৈরবে শিমুলকান্দি আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মফিজ উদ্দিন খান ২০০৯ সালে শিমুল কান্দি বিদ্যুৎ অফিসে যোগদান করে এলাকায় একটি সিন্ডিকেট দালালচক্র গড়ে তোলেন। তাদের মাধ্যমে নতুন লাইন সংযোগ এবং মেরামতের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ সার্ভিস লাইন ও বৈদ্যুতিক খুঁটি মেরামত, বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের উপর ঝুলে থাকা সড়কের গাছ ও ডালপালা পরিস্কার না করে প্রতিমাসে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয় মেরামত বাবদ সরকারি বরাদ্ধকৃত সরঞ্জামাদি তিনি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার আওতাধীন এলাকায় ফ্যাক্টরী বা কোন মিল কারখানায় নতুন বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ নিতে চাইলে দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে লাইন সংযোগ দিয়ে থাকেন। দাবিকৃত টাকা না দিলে নানা টালবাহানা করে মাসের পর মাস হয়রানি করে থাকেন। এছাড়াও প্রায়ই তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গ্রাহকদের অভিযোগে আরো জানা যায়, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসটি ও এলটি আইন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন ট্রান্সফরমারসহ শ্রী-নগর পূর্ব-পাড়া মুকুল মাষ্টারের বাড়ী থেকে রেহান মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত ২০টি খুঁটি বসিয়ে লাইনটি চালু করে দিয়েছেন। শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় ৭/৮ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। তাছাড়া কমপক্ষে দুইশ সেচ পাম্প প্রকল্প রয়েছে। অভিযোগ আছে বছরের পর বছর ধরে গ্রাহকরা মিটার সংযোগের জন্য তাগাদা দিলেও কোনো প্রকার মিটার না দিয়েই গড় বিল করে মোটা অংকের টাকা কামাচ্ছেন এই অসাধু কর্মকর্তা।

ভবানিপুর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া জানান, গত কয়েক মাস আগে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে তার ভাই ইদু মিয়া এলাকায় একটি আইস ফ্যাক্টরী করে নতুন বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগের আবেদন করলে তার কাছে অর্ধ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় নানা তালবাহানা করে তাকে কয়েক মাস যাবৎ হয়রানি করছে।

শ্রী-নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহের মিয়া জানান, বধূনগর গ্রামের তারা মেম্বারের বাড়ি হইতে ইসলামপুর পর্যন্ত বৈদ্যুতিক লাইনের ৩০ টি খুঁটি বসানের জন্য আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খান ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। অথচ স্থানীয় মাননীয় সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন ওই এলাকায় এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত আবেদনে স্বাক্ষর করে প্রকৌশলীকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিলেও টাকা না দেয়ায় তিনি অধ্যাবধি কাজটি সম্পন্ন করেননি ।

শ্রী-নগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অবঃ) তাহের মিয়া জানান, ওই প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগে একাধিকবার এখান থেকে বদলী হয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ৯ বছর যাবৎ শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরী করছেন। তিনি ২০০৯ সালে শিমুল কান্দি বিদ্যুৎ অফিসে যোগদান করে এলাকায় একটি সিন্ডিকেট দালালচক্র গড়ে তোলেন। তাদের মাধ্যমে নতুন লাইন সংযোগ এবং মেরামতের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সার্ভিস লাইন ও বৈদ্যুতিক খুঁটি মেরামত, বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের উপর ঝুঁলে থাকা সড়কের গাছ ও ডালপালা পরিস্কার না করে প্রতিমাসে ভূঁয়া বিল ভাউচার তৈরী করে সরকারী মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয় মেরামত বাবদ সরকারি বরাদ্ধকৃত সরঞ্জামাদি তিনি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ভবানিপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান জানান, বিদ্যালয়ের নামে ব্যবহৃত ৩০ ইউনিটের পরিমাণ দেখালেও বিল আসে প্রায় পাচঁ হাজার টাকা। একটি বিদ্যালয়ের বিল যদি অবহেলার চোখে দেখা হয় তাহলে অন্যান্য গ্রাহকদের অবস্থা কি হবে? এর প্রতিকারের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেন নি।

উল্লেখ্য গেল বছরের নভেম্বরে তদন্ত ও শৃঙ্খল পরিদপ্তর বরাবরে স্থানীয় ২৭জন ভুক্তভোগী গ্রাহকদের একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে ১৪ই জানুয়ারী সোমবার দুপুরে শিমুল কান্দি বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের অপসারন দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়াও অনতিবিলম্বে এই অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে লাগাতার কর্মসূচীর ডাক দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন বিক্ষোব্ধ এলাকাবাসী।

বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ ভৈরব বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান , আশুগঞ্জ থেকে ভৈরবে বিদ্যুৎ পৌছতে সিস্টেম লসের কারনে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২% হারে অতিরিক্ত বিল আদায়ের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না ।

আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে তদন্ত ও শৃঙ্খলা পরিদপ্তরসহ বিদ্যুত বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের লিখিত অভিযোগে প্রেক্ষিতে জানতে চেয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য, প্রশাসন মোঃ জহিরুল হক এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads