• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
জেলায় ঘুরছে পুলিশের মনিটরিং কমিটি

লোগো বাংলাদেশ পুলিশ

সারা দেশ

জেলায় ঘুরছে পুলিশের মনিটরিং কমিটি

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জেলায় জেলায় ঘুরছে পুলিশ সদর দফতরের মনিটরিং কমিটি। জেলা বা থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদকে যুক্ত থাকা, ঘুষ, অন্যায় অনিয়ম এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পেলে পুলিশ সদর দফতরে অবহিত করবেন তারা। তাদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের ভাবমূর্তিকে এক ধাপ তুলে ধরতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের পলিসি হচ্ছে অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ, জঙ্গি ও মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করা। এরই ধারাবাহিকতায় জনমনে আরো আস্থা অর্জন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় পুলিশের এখন অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে— জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধ অব্যাহত রাখা, সমাজ থেকে মাদকের প্রকোপ কমিয়ে আনা। ইতোমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে নানামুখী কর্ম পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দফতর। ফলে মাদক কিছুটা হলেও হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে প্রায় ২০০ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান বলেন, ১০ বছর আগেও থানায় গেছেন। এখন একটু গিয়ে দেখেন কতটা পরিবর্তন। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষ আইনগত সহায়তা নিতে এসপি ডিআইজি কাছে যায় না, যায় থানায়। এক সময় থানা পুলিশের কাছে কেউ আইনগত সহায়তার জন্য গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো ব্যবহার ও আইনগত সহায়তা পাওয়া যেত না বলে অভিযোগ ছিল। ফলে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণাটাও বিদ্যমান ছিল। এখন আর সে চিত্র নেই বললেই চলে। এখন কেউ জিডি, মামলা বা অন্য কোনো ধরনের আইনগত সহায়তা চাইতে গেলে থানার ডিউটি অফিসার প্রথমেই তাকে সাধুবাদ জানায় এবং ধৈর্য সহকারে আগন্তুকের কথা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ কাজটিই পুলিশ সদর দফতর থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি তত ভালো হচ্ছে। এতে জনমনে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি আরো বলেন, যে ধারা শুরু করা হয়েছে এই ধারা অব্যাহত রাখা গেলে সেদিন আর বেশি দূরে নেই যেদিন পুলিশকে মানুষ বন্ধু এবং ভরসাস্থল মনে করবে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে। আগের যেকোনো বারের তুলনায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বহগুণ হ্রাস পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ওই বছর কনস্টেবল নিয়োগের আগেই নিয়োগ বাণিজ্যের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নিয়োগ স্থগিত করা হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশের পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন। যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য কঠোর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি একাধিক মনিটরিং কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান নেয়। কোথায় দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে সেই রিপোর্ট পুলিশ সদর দফতরে পাঠালে আইজিপি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। ফলে দালাল ও বাণিজ্য লোভীদের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে। হাতেগোনা কিছু অনিয়মের অভিযোগ বাদ দিলে অনেকটা স্বচ্ছতার সঙ্গে ২০১৮ সালে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

সেই আদলে এবার একাধিক কমিটি করা হয়েছে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য। এই কমিটি বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে কোন পুলিশ সুপার মাদক প্রশ্রয় দিচ্ছে, ‘আজান’ দিয়ে ঘুষ খাচ্ছে। কোন ওসি বা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে। কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ সদর দফতর।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি এইচ আর এম মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীর নানা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। এখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ইচ্ছে করলেই ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আমি মনে করি ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মাঝে একটা উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। হাতে গোনা যারা আছেন ঘুষ দুর্নীতিতে জড়ান তাদের প্রতি পুলিশ সদর দফতরের মেসেজ হচ্ছে, এগুলো এখন থেকে আর চলবে না। এখন শুধুই ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করার পালা। পুলিশ বাহিনীর সেবার মান বাড়াতে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে নানা পদেক্ষপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব বাস্তবায়িত হলে পুলিশকে সাধারণ মানুষ বন্ধু মনে করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads