• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শেষ হলো মাছ মিষ্টির ‘পোড়াদহ মেলা’

শেষ হলো মাছ মিষ্টির ‘পোড়াদহ মেলা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

শেষ হলো মাছ মিষ্টির ‘পোড়াদহ মেলা’

  • বগুড়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সনাতন পঞ্জিকা মতে বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাঘ সংক্রান্তি মেলা। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার বসে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা। ইছামতির তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে মেলাটি বসে, তাই ‘পোড়াদহ মেলা’ নামেও পরিচিত এটি। সূর্যোদয়ের পর থেকেই মেলায় ঢল নামে বিভিন্ন বয়সের মানুষের। এ মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, নানা প্রজাতির বড় মাছ আর নানা রকম মিষ্টি।

পোড়াদহের মেলা এক দিনের হলেও আশপাশের গ্রামে তিন দিন ধরে চলে ‘জামাই উৎসব’। মেলায় ওঠা বড় মাছ আর মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় এলাকার জামাইদের। উপহার হিসেবে তাদের জন্য কেনা হয় কাঠের আসবাবপত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার একই জায়গায় বসেছে ‘বউ মেলা’। নতুন বউদের জন্য চুড়ি, ফিতা, গহনা আর রূপচর্চার উপকরণে সাজানো হয়েছে মেলার দোকানগুলো। পোড়াদহের মেলা উপলক্ষে বাবার বাড়িতে আসা নারী আর স্থানীয় নববধূরাই ‘বউ মেলা’-র প্রধান ক্রেতা।

এ বছর ‘পোড়াদহ মেলা’ আয়োজনের দায়িত্বে ছিল পোড়াদহ সার্বজনীন পূজা কমিটি। আয়োজন সম্পর্কে মহিষাবান এলাকার ৭০ বছরের বৃদ্ধ সুভাশীষ জানান, প্রায় দেড়শ বছর আগে পোড়াদহ এলাকায় মরা বটগাছের নিচে আসন নিয়েছিলেন এক হিন্দু সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসীর দীর্ঘ সাধনার পর মৃত বটগাছটি আবার সবুজ হয়ে উঠেছিল। এ কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পোড়াদহের মেলা ‘সন্ন্যাস মেলা’ নামেও পরিচিত।

এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় মাছটির ওজন ছিল ৭০ কেজি। গোলাবাড়ী এলাকার জেলে বিফল মণ্ডল যমুনা নদী থেকে বাঘাইড় মাছটি ধরে মেলায় নিয়ে আসে। প্রতি কেজি এক হাজার ৫০০ টাকা দরে মাছটির দাম তিনি চেয়েছিলেন ১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। দুপুর পর্যন্ত এককভাবে কেউ মাছটি কিনতে পারেনি। পরে কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হয়। মেলায় শরফাত আলীর কাছ থেকে ৪০ কেজি ওজনের দ্বিতীয় বড় বাঘাইড় মাছ ৪৬ হাজার টাকায় কিনেছেন নওগাঁর ব্যবসায়ী মোসারব হোসেন। পোড়াদহের মেলায় এবারই প্রথম এসেছেন মোসারব। তিনি বলেন, আমি এই মেলার কথা অনেক শুনেছি। এখানে অনেক বড় বড় মাছ পাওয়া যায় শুনেই এসেছি। ওজনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় বড় মাছটি কিনলাম। খুব ভালো লাগছে।

বাঘাইড়ের পাশাপাশি রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, বোয়ালসহ অর্ধশত প্রজাতির মাছ কেনা-বেচা হয়েছে এবারের মেলায়। মাছের পর এ মেলার বড় আকর্ষণ হলো মিষ্টি। কোনো কোনো মিষ্টির আকার আবার মাছের মতো। সেই মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। মাছ মিষ্টির পাশাপাশি কাঠের আসবাবপত্রের দোকানগুলোয়ও ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে।

পোড়াদহ সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুমার রায় বলেন, সামাজিকভাবে এই মেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। এ মেলাকে ঘিরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম ঘটে। প্রতিবছর যেখানে মেলা বসে, সেখানে বোরো আবাদের কারণে এবার মেলা বসেছিল সামান্য দূরে কাতলাহার বিলের পাশের নিচু জমিতে। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসে এই কাতলাহার বিলের কথাই লিখে গেছেন। স্থান পরিবর্তন হলেও এবার মেলায় লোক সমাগম ছিল আগের মতোই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads