• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
পিয়ারু মিয়া বলে ডাকতেন যাকে

কবি আল মাহমুদ

সংরক্ষিত ছবি

সারা দেশ

পিয়ারু মিয়া বলে ডাকতেন যাকে

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আল মাহমুদ গত শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মৌড়াইল মহল্লার মোল্লাবাড়িতে জন্ম নীেয়া আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। স্থানীয়রা তাকে পিয়ারু মিয়া বলে ঢাকতেন।

পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার কারণে মাঝেমধ্যে অল্প সময়ের জন্য পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসতেন তিনি। তবে বছরখানেক আগে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে তার প্রিয় জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার মরদেহ যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমাহিত করা হয় সেটাই চাইছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে ভাষাসৈনিক মুহাম্মদ মুসা বলেন, আল মাহমুদ স্বাধীন বাংলা পররাষ্ট্র দফতরে চাকরি করতেন। কাবলি বোন বইয়ে তিনি একটি লেখার পর তাকে এই লেখার জন্য জেলে প্রেরণ করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রকাশনা পরিচালকের দায়িত্ব দেন।

তার ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন আরো আগেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়।

কবির আপন ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন রবিন বলেন, স্থানীয়রা কাকাকে পিয়ারু মিয়া বলে ডাকতেন। তিনি মাঝে মাঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলেও নিজ পৈতৃক ভিটিতে থাকেননি প্রায় এক যুগের বেশি সময়। অসুস্থতাজনিত কারণে গত এক বছর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। তার মৃত্যুর খবর আত্মীয়স্বজন ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন। তার স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা চাচ্ছেন তার মরদেহ নিয়ে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবর দিতে। কিন্তু ঢাকার বুদ্ধিজীবীরাও চাইছেন ঢাকায় কবর দিতে।

তিনি বলেন, কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর বা রাউডি ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। সেখানে ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। এতে তিনি মনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এর পর থেকেই উনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন।

রবিন আরো বলেন, নিজ বাড়িতে যখন আসতেন তখন তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। তাদের সঙ্গেথ গল্প করে অনেক সময় দিতেন। দিনে বেশিরভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুরের ঘাটে। অনেক সময় বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন। যখন তার ইচ্ছে হয়েছে চলে যেতেন তিতাস নদীর পাড়ে, সেখানে গিয়ে তিনি লেখালিখি করতেন।

মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি, কাকা অনেক সময় একা একা চলে যেতেন শহরের শিমরাইলকান্দি শ্মশানে। সেখানে বসে  লেখালিখি করতেন। শ্মশানে যাওয়ার জন্য বড়রা পিয়ার কাকাকে অনেক বকাঝকা করতেন।

কবি আল মাহমুদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে গণকণ্ঠের সম্পাদক থাকাকালে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি।

 

কবি আল মাহমুদের রচনার মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, বখতিয়ারের ঘোড়া, একচক্ষু হরিণ, দোয়েল ও দয়িতা, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, নদীর ভিতরে নদী, না কোনো শূন্যতা মানি না, বিরামপুরের যাত্রী, বারুদগন্ধি মানুষের দেশ, সেলাই করা মুখ, তোমার রক্তে তোমার গন্ধ ইত্যাদি।

কবির সাড়া জাগানো উপন্যাস কাবিলের বোন, পানকৌড়ির রক্ত, উপমহাদেশ, ডাহুকি, যেভাবে বেড়ে উঠি, আগুনের মেয়ে, যমুনাবতী, চেহারার চতুরঙ্গ, যে পারো ভুলিয়ে দাও, ধীরে খাও অজগরী ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মের জন্য আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads