• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যায়োগ্যাসে চলছে গাড়ি

টেকনাফ ম্যাপ

সারা দেশ

ব্যায়োগ্যাসে চলছে গাড়ি

  • জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মুরগির খামার থেকে উৎপাদিত ব্যায়োগ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে তা প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই প্রকল্প কক্সবাজারের টেকনাফে বেশ সাড়া ফেলেছে। এসব গাড়ির মালিক স্টেশন থেকে এ গ্যাস সংগ্রহ করে জ্বালানির চাহিদা পূরণ করছেন।

সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সহায়তা ছাড়া শুধু ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন স্থানীয় এক উদ্যোক্তা কবির আহমদ। দীর্ঘ চার বছরের শ্রমে তিনি গড়ে তোলেন সফল এ প্রকল্পটি। যার ফলে একটি অনিশ্চিত প্রকল্প এখন আলোর মুখ দেখেছে।

টেকনাফ শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন এলাকায় প্রায় এক যুগ ধরে মুরগির খামারের ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় কবির আহমদ। এই এক যুগে তিনি গড়ে তোলেন ৬টি খামার। যেখানে প্রায় ৪৫ হাজার মুরগি ডিম দেয়। এক সময় এসব মুরগির বিষ্ঠা নিয়ে বেকায়দায় পড়েন কবির আহমদ। কারণ, মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এই অবস্থা থেকে এলাকাকে রক্ষা করতে উদ্যোগী হন খামারি কবির আহমদ। চার বছর অক্লান্ত চেষ্টার পর সফলও হন তিনি। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের খোনকারপাড়া এলাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাছে মুরগির খামারের পাশেই গড়ে তোলেন সাগর ফিলিং স্টেশন।

কবির আহমদ বলেন, সহকর্মী এক খামারির পরামর্শে গড়ে তোলেন ব্যায়োগ্যাস প্রকল্প। এতে তিনি একদিকে পরিবেশ রক্ষা করবেন, অন্যদিকে উৎপাদিত ব্যায়োগ্যাস এলাকায় বিক্রি করবেন। কিন্তু উৎপাদিত গ্যাস কোথাও কাজে লাগাতে পারছিলেন না। সিদ্ধান্ত নিলেন আরো বেশি আর্থিক ঝুঁকি নেবেন, ব্যায়োগ্যাসকে সিএনজি জাতীয় গ্যাসে রূপান্তরের। তাই চেষ্টা করতে লাগলেন চার বছর ধরে। দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ব্যায়োগ্যাস প্রকল্প দেখেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শেও কোনো কাজ হচ্ছিল না। সবশেষে ভারত সফর করে অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। এখানে এসে তা প্রয়োগ করলেন এবং সফল হলেন। চলতি বছরের প্রথম থেকে এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে পেল। খরচ হলো প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

তিনি আরো বলেন, কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে আর্থিক সহযোগিতা না নিয়ে খামারের আয়ের টাকা দিয়েই তিনি এ সফলতা অর্জন করেছেন। প্রতিদিন তিনি সিএনজি স্টেশন থেকে ১৫-২০ হাজার টাকার গ্যাস বিক্রি করছেন। ১০টি সিলিন্ডারে ব্যায়োগ্যাস থেকে সিএনজি রূপান্তরিত করে কার-মাইক্রোতে সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ করছেন। তার দাবি, এটিই দেশে প্রথম এ ধরনের একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পটি ছড়িয়ে দিতে পারলে গোটা দেশে আরো অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে। তাই এই প্রকল্পে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

টেকনাফের মাইক্রোচালক নুরুল আলম বলেন, অন্যান্য সিএনজি থেকে ব্যায়োগ্যাস একটু হালকা মনে হয়। অর্থাৎ মনে হবে চালানোর সময় গাড়ি একটু ভারী ভারী। আসলে টুনিং একটু অ্যাডজাস্ট করে দিতে হয়। তখন পুরোপুরি ঠিক হয়ে পরিষ্কারভাবে গাড়ি চালানো যায়। তিনি আরো বলেন, আমাদের গাড়িগুলো তো সিএনজি ফরম্যাটে অ্যাডজাস্ট করা থাকে। যখন ব্যায়োগ্যাস ব্যবহার করা হয় তখন টুনিং একটু পরিবর্তন করে দিলেই হয়। নুরুল আলম আরো বলেন, টেকনাফে এই গ্যাস পাওয়ার ফলে গাড়ির মালিকরা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে ভাড়া যেতে পারছেন। টেকনাফ থেকে ব্যায়োগ্যাস নিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম যান। আর সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে টেকনাফ আসছি। এতে আমরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছি।

স্থানীয় এক যুবক বশির আহমদ বলেন, প্রথম প্রথম এলাকার অনেকে উদ্যোক্তা কবির আহমদকে ভারসাম্যহীন ভাবতে শুরু করেন। কীভাবে এতদিন ধরে লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন এখানে। কেউ চিন্তাও করেননি ব্যায়োগ্যাস উৎপাদন করে তা রূপান্তর করে গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। গত চার বছর ধরে অদম্য চেষ্টার ফলে আজ সফল হয়েছেন। এখন এখানে প্রতিদিন অনেক কার-মাইক্রো গ্যাস নিতে আসে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads