• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
আল মাহমুদ ভালোবাসতেন রাউডি ঘরটিকে

রাউডি ঘরটি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

আল মাহমুদ ভালোবাসতেন রাউডি ঘরটিকে

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিজের গ্রামে পিয়ারু মিয়া হিসেবে পরিচিত ছিলেন কবি আল মাহমুদ। জন্মভূমিতে গেলে তখন ভক্তদের ঢল নামত। পৈতৃক ভিটায় গিয়ে কখনো কখনো তিনি চলে যেতেন তিতাস নদীর পাড়ে অথবা স্থানীয় শ্মশানে। সেখানে গিয়ে তিনি লেখালেখি করতেন। সদ্য প্রয়াত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে এমন তথ্য দেন তার ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন। 

১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কবি আল মাহমুদ। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। নিজ এলাকায় পরিচিত ছিলেন পিয়ারু মিয়া নামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। তিনি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়। কথা হয় কবির ভাতিজা রবিনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, কাকা মাঝেমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলেও নিজ পৈতৃক ভিটাতে থাকেননি প্রায় এক যুগের বেশি সময়। আর অসুস্থতার কারণে গত এক বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। তিনি  বলেন, কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর বা রাউডি ঘর ছিল। যখন তিনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। সেখানে ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। এতে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এরপর থেকেই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন। রবিন আরো বলেন, নিজ বাড়িতে যখন আসতেন তখন তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। তাদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাতেন। দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুুরের ঘাটে। অনেক সময় বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন। যখন তার ইচ্ছে হয়েছে চলে যেতেন তিতাস নদীর পাড়ে, সেখানে গিয়ে তিনি লেখালেখি করতেন। মুরব্বিদের মুখে শুনেছি, কাকা অনেক সময় একা একা চলে যেতেন শহরের শিমরাইলকান্দি শ্মশানে। সেখানে বসে লেখালেখি করতেন। শ্মশানে যাওয়ার জন্য বড়রা পিয়ার (পিয়ারু) কাকাকে অনেক বকাঝকা করতেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে গণকণ্ঠের সম্পাদক থাকাকালে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এ প্রধান কবি গত শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে এখনো শোকাচ্ছন্ন নিজ গ্রাম ও দেশের মানুষ।

কবি আল মাহমুদের রচনার মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ- লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, বখতিয়ারের ঘোড়া, একচক্ষু হরিণ, দোয়েল ও দয়িতা, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, নদীর ভিতরে নদী, না কোনো শূন্যতা মানি না, বিরামপুরের যাত্রী, বারুদগন্ধি মানুষের দেশ, সেলাই করা মুখ, তোমার রক্তে তোমার গন্ধ ইত্যাদি। কবির সাড়া জাগানো উপন্যাস- কাবিলের বোন, পানকৌড়ির রক্ত, উপমহাদেশ, ডাহুকি, যেভাবে বেড়ে উঠি, আগুনের মেয়ে, যমুনাবতী, চেহারার চতুরঙ্গ, যে পারো ভুলিয়ে দাও, ধীরে খাও অজগরী ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মের জন্য আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তবে জীবদ্দশায় কালজয়ী এই কবিকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে দেশের সামাজিকমাধ্যমে নানা রকমের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বিভিন্নজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads