• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
চাকসু নির্বাচন কবে

ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু)

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

চাকসু নির্বাচন কবে

  • জুবাইর উদ্দিন, (চবি)
  • প্রকাশিত ১৭ মার্চ ২০১৯

দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। প্রশ্ন উঠেছে কবে হচ্ছে চাকসু নির্বাচন।

জানা গেছে, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বাম সংগঠন চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে। এ ছাড়া ৪ কর্মসূচিসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে ছাত্র ইউনিয়ন। অন্যদিকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

তবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও ছাত্রদলের প্রচেষ্টাও থেমে নেই। বিভিন্ন বিবৃতি ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে তারাও চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সকল ছাত্র সংগঠনের আগ্রহ থাকলেও নির্বাচন নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ছাত্রসংগঠনগুলো সহাবস্থানের নিশ্চয়তা দিলে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলে নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে।

গত মঙ্গলবার প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল পুনরায় ঘোষণা ও অবিলম্বে চাকসু নির্বাচনের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের মিছিলে হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দিন, জিএস নির্বাচিত হন আজিম উদ্দিন ও এজিএস নির্বাচিত হন মাহবুবুর রহমান শামিম। ওই কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ২৭ জনের। একই বছর ডিসেম্বরে নির্বাচনে হেরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্র ঐক্যের নেতা ফারুকুজ্জামান খুন হন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাকসুর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তৎকালীন প্রশাসন। বন্ধ হয়ে যায় চাকসুর হল সংসদের কার্যক্রমও।

১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মাত্র ছয় (৬) বার। প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন শহীদ আবদুর রব। সর্বশেষ নির্বাচনের পর দীর্ঘ ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলো চাকসু নির্বাচনের দাবি তুললেও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে নির্বাচন হয়নি বলে দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, সিনেটের ১০১ সদস্যের মধ্যে ৫ জন হবেন ছাত্র প্রতিনিধি। কিন্তু চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। ফলে প্রতিবছর ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিনেট সভা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীর দাবি দাওয়াগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপিত না হওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান।

চাকসুর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে চাকসু নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন। ২৮ বছর ধরে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারছি না আমাদের প্রতিনিধি না থাকার ফলে। আমরা চাই অবিলম্বে নির্বাচন দিক।

গত বৃহস্পতিবার রসায়ন বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও যেন চাকসুর নির্বাচন হয় এই আশা ব্যক্ত করে বলেন, নেতৃত্বের বিকাশের জন্য ছাত্রসংসদের কোনো বিকল্প নেই। আমি আজকে এ অবস্থায় আসতে পারতাম না যদি, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা না থাকত। এসব পর্যায় নেতৃত্ব বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান প্রশ্নে ছাত্রলীগের দাবি, সব দলই সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচন চায়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অবশ্যই থাকবে। তবে ছাত্রদলের দাবি তারা কোনোভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না। ক্যাম্পাসে তাদের কোনো কর্মী গেলেই মারধরের স্বীকার হচ্ছে।

চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, চাকসু নির্বাচন এখন সব সংগঠনের  প্রাণের দাবি। সবাই এখন চাকসু নির্বাচন চায়। আমাদের পক্ষ থেকেও কয়েক দফা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাকসু নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য তাগাদা দিয়ে আসছি। যদি অল্প কিছু দিনের মধ্যে চাকসু নির্বাচনের আয়োজন না করে তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমরা শুরু থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা চাকসু নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা বলেন, চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমদের আন্দোলন চলছে, চলবে। যতদিন প্রশাসন নির্বাচনের আয়োজন করবে না ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads