• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
দখল দূষণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে দাদনা খাল

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

দখল দূষণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে দাদনা খাল

  • ফেনী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০১৯

জনসংখ্যার চাপে বাড়ছে ঘর-বসতি। দেশের সব এলাকায় বাড়ছে আবাসনের বিস্তৃতি। ফলে দখল হয়ে যাচ্ছে দেশের নদ-নদী, জলাশয় এবং ছোট ছোট ছড়া ও খাল। একইভাবে দখল হচ্ছে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দাদনা খালটি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা জমে যেমনি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, তেমনি দখল হয়ে যাচ্ছে খালটির দুপাড়ের বিশাল অংশ।

স্থানীয়দের দাবি, চাষাবাদের জমি ও পাখ-পাখালির প্রাণ এই খালটি অবৈধ দখলমুক্ত ও সংস্কার করে এখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা হোক।

উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, নোয়াখালীর কবিরহাট থেকে উৎপন্ন হয়ে কোম্পানীগঞ্জ ও দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের দুধমুখা বাজার ও দাগনভূঞা-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দাদনা খাল। এটি সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া খালে মিশে ছোট ফেনী নদীতে মিলিত হয়েছে। খালটি প্রস্থ ৫০ থেকে ৬০ ফুট। দাগনভূঞা উপজেলায় এর দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। কথিত আছে, একসময় উপজেলা শহরগুলোতে খাদ্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল এই খালটি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় খালটির বড় একটি অংশ এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে। ৬০ ফুটের খালটি বর্তমানে কোনো কোনো স্থানে ১৫ থেকে ২০ ফুটে সংকুচিত হয়ে এসেছে। কেউ কেউ খালের জমি দখল করে দুই থেকে তিনতলা ভবনও তৈরি করেছেন। কেউ আবার খালের ওপর করেছেন দোকানঘর।

স্থানীয়রা বলেন, দাগনভূঞা পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনা এবং জবাই করা গবাদিপশুর ময়লা ও বাসা-বাড়ির আবর্জনা এ খালটিতে এসে পড়ছে। বিশেষ করে উপজেলা শহরের কাঁচাবাজারের বর্জ্যে ভরে গেছে গোটা খাল। ফলে বর্ষায় কিছুটা পানির প্রবাহ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পুরোপুরি বন্ধ থাকে খালটি। এ সময় ময়লা-আবর্জনার পচা গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়। দাগনভূঞা বাজারের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান জানান, একসময় খালটির অনেক ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু অবৈধভাবে দখল আর সংস্কার না করায় এটি এখন পার্শ্ববর্তীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্কারের অভাবে খালটিতে শীতকালে পানির প্রবাহ বন্ধ থাকে। এতে দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকায় পানি ও ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। নিচের বাজার এলাকার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সুলতান আহমেদ জানান, খালটি পরিষ্কার না করায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় সবসময় পচা দুর্গন্ধ থাকে। কোনো কোনো এলাকায় দুর্গন্ধের কারণে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্তমানে খালটি জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

সোনাগাজীর চর মজলিশপুর ইউনিয়নের কৃষক নেতা আবদুল কাদের মিয়া জানান, একসময় রবি মৌসুমে দাদনা খালের পানি দিয়ে শাকসবজিসহ ধান চাষ করা হতো। কিন্তু এখন শীতকালে এ খালে পানি থাকে না। তাই হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।

দাগনভূঞা পৌরসভার মেয়র ফারুক খান জানান, ‘বার বার অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হলেও আইনি জটিলতার কারণে পারা যাচ্ছে না। জবরদখলকৃতরা একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে বহাল তবিয়তে ভোগদখল করে যাচ্ছে। খালটি ড্রেজিং করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে। তহবিল অনুমোদন হলে জবরদখল থাকবে না।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads