• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
চুরির অপবাদে বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে এক বৃদ্ধ মহিলাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। এঘটনার পর থেকে ঐপরিবারের লোকজন পালাতক রয়েছেন।

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

চুরির অপবাদে বৃদ্ধাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০১৯

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে এক বৃদ্ধ মহিলাকে চুরির অপবাদ দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পরিবার। বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও একটি ভিডিওর মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে নির্যাতনকারীরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। গত রোববার সকালে উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মোল্লাবাড়িতে এ নির্মম ঘটনাটি ঘটে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামের দক্ষিণপাড়া মোল্লাবাড়ির মৃত আবু তাহেরের ছেলে মিজানুর রহমান ও সুমন তাদের বাড়ির জায়গায় বেড়া দিতে গেলে একই বাড়ির শহিদুল্লাহর স্ত্রী বেলুয়া খাতুন (৫২) বাধা দেয়। এতে মিজান ও সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে বেলুয়া খাতুনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ওই সময় মিজানের স্ত্রী কাজল বেগম ও সুমনের স্ত্রী রোজিনা বেগম ঘটনাস্থলে এসে বেলুয়া খাতুনকে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে তারা বেলুয়া খাতুনকে তার মাথার চুল ধরে মাটিতে টেনেহিঁচড়ে নিজ বাড়ির উঠানে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মোবাইল ফোন ও টাকা চুরির অপরাধে বেদম মারধর করতে থাকে। বিষয়টি পাশের বাড়ি থেকে জনৈক ছাত্র ভিডিও ধারণ করে সংবাদকর্মীদের সরবারাহ করে।

খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বেলুয়া খাতুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে বেলুয়া খাতুনের স্বামী শহিদুল্লাহ বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী শহিদুল্লাহ বলেন, আমি আমার পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। দুই দলিলে সাড়ে ২৮ শতক জায়গা ক্রয় করে বসবাস করছি। আমার নিজ নামে বিবাদীদের পিতা আবু তাহেরের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতক জায়গা ক্রয় করেছি, অথচ ওই জায়গা বিবাদীরা দখল দিয়ে আমাকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে। ঘটনার দিন সকালে বিবাদী আবু তাহের গং আমার খরিদা জায়গায় বেড়া দিতে এলে আমার স্ত্রী বেলুয়া খাতুন তাদের বাধা দেয়। বাধা দেওয়ার কারণে তারা আমার স্ত্রীকে তাদের বাড়িতে নিয়ে মোবাইল ফোন ও টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে। আমি অসহায় বিধায় এই সমাজে বিচার পাই না। অপারগ হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। এই বর্বরোচিত ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।

আহত বেলুয়া খাতুন বলেন, আমার স্বামীর নামীয় জায়গায় প্রতিপক্ষের মিজান ও সুমন বেড়া দিতে এলে আমি তাদের বাধা দেই। তারা আমার বাধা উপেক্ষা করে জোর খাটিয়ে বেড়া দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। আমার শত বাধাও তাদের টলাতে পারেনি। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে তাদের বাড়িতে ধরে নিয়ে এসে মোবাইল ফোন ও টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন করে। আমি শত চেষ্টার পরও তাদেরকে দমাতে পারিনি। পরে গাছ থেকে ছাড়িয়ে বাড়ির উঠানে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে।

তিনি আরো জানান, তারা আমাকে বেদম মারধর করে এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রকাশ্যে ভিডিও করে। ঘটনা সম্পর্কে জানতে বিবাদীর বাড়ি গেলে সুমনের স্ত্রী রোজিনা বেগম ব্যতীত কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রোজিনা বেগম বলেন, চুরির ঘটনায় নয় সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে আমার ভাসুর ও আমার স্বামী শহিদুল্লাহর স্ত্রী বেলুয়া বেগমকে ধরে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমাদের সঙ্গে জায়গা-জমি নিয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের বিরোধ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী সুমন মাঠে কাজ করে আর আমার ভাসুর প্রবাসে থাকে। তারা সাধারণ মানুষ। উত্তেজিত হয়েই তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, শহিদুল্লাহ একজন অসহায় মানুষ। সাধারণ জীবন-জীবিকা তার। পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর নিজ নামে খরিদা জায়গায় বসবাস করে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিপক্ষ তাদের প্রভাব খাটিয়ে জায়গা দখল করার পাঁয়তারা করছে। এজন্য তারা বিভিন্ন সময় নিরীহ পরিবারটির ওপর নির্যাতন করে আসছে।

এ বিষয়ে শাহরাস্তি থানার ওসি মো. শাহআলম জানান, আমাদের থানার এসআই নজরুল ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতিত মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরে তারা থানায় মামলা না করে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আদালতের কাগজ থানায় এলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads