• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
পদ্মা-মেঘনায় এক মাসে ৭ টন জাটকা জব্দ

পদ্মা-মেঘনায় এক মাসে ৭ টন জাটকা জব্দ

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

পদ্মা-মেঘনায় এক মাসে ৭ টন জাটকা জব্দ

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০১৯

ইলিশ রক্ষায় নদীতে মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ লক্ষ্যে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স সদস্যরা নদীতে পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও জাটকা নিধন পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুর নৌ সীমানার বিভিন্ন স্থানে চলছে জাটকা নিধন। দিনের আলোয় সুযোগ কম থাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই জাটকা নিধনে নদীতে নেমে পড়ে অসংখ্য জেলে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরার অপরাধে গত এক মাসে অন্তত ৮৯ জেলেকে আটকের পর জেল-জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল ও প্রায় ৭ টন জাটকা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধনের বিষয়টি শিকার করেছেন চাঁদপুরের জেলা মৎস্য অফিসার আসাদুল বাকী। তিনি বলেন, জেলেরা আসলে চুরি-চামারি করে জাটকা শিকার করছে। নদীতে অভিযানে গেলেই ১০ থেকে ২৫ জন জেলে পর্যন্ত আটক করা হচ্ছে। এভাবেই চলছে। এরপরও মাছ শিকার থেমে নেই। আমরাও নদীতে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরছি, জেল-জরিমানা করছি। এসব উপেক্ষা করেই তারা জাটকা নিধন করছে।

জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল, একলাসপুর, আমিরাবাদ, চাঁদপুর সদর উপজেলার সফরমালী, আনন্দবাজার, রনাগোয়াল, টিলাবাড়ী, রাজরাজেশ্বর, বহরিয়া, হরিণা, আখনেরহাট, কাটাখালী, তেলিরমোড়, চরভৈরবী এলাকায় কিছু অসাধু জেলে জাটকা নিধন চলছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার পুরানবাজার এলাকার জেলে আবদুর রহিম বলেন, মোহনপুর, এখলাসপুর, গজারিয়া এলাকার জেলেরা এসে আমাদের এলাকায় জাটকা শিকার করে। সেই সঙ্গে আমাদের এখানকার কিছু জেলেও মাছ শিকার করে। জাটকা ধরা বন্ধ না করতে পারলে অভিযান দেওয়ার দরকার কি?

জেলে জহির উদ্দিন বলেন, আমরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছি। কিন্তু এই সময়ে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলেদের মাত্র ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। একটি সংসার শুধু চাল দিয়ে চালানো সম্ভব না। তাই সরকারি সহযোগিতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

জেলে জাকির হোসেন বলেন, সরকার দুই মাস নদীতে মাছ ধরতে নিষেধ করেছে। তাই আমরা এখন নদীতে নামছি না। জাল আর নৌকা মেরামত করছি যেন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে মাছ ধরতে কোনও অসুবিধা না হয়।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, এ বছর জেলেরা অনেকটা বেপরোয়া। হয়তো নিষেধাজ্ঞাটা লম্বা সময় হওয়ায় এবং নদীতে মাছ বেশি থাকায় জেলেরা লোভ সামলাতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি। তারপরও আমরা বলবো না শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারছি না। এক মাসে আমরা প্রায় ১শ’ জনকে কারাদ্ল দিয়েছি। ইতোমধ্যে এ অভিযানে যুক্ত হয়েছে নৌবাহিনী।

জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, গত ১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রমে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে ৬৩টি। যেখানে মোট অভিযান পরিচালিত হয়েছে ২২৩টি। এসব অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ৬ মেট্রিক টন ৯১৯ কেজি জাটকা। ১০ কোটি টাকা ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের ৬৯ লাখ ৬৮২ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের অভিযানে ৮৯ জেলেকে আটকের পর তাদেরকে সর্বোচ্চ ২ বছর থেকে শুরু করে ১ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। জব্দকৃত জাটকা বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। আর জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও জেলা টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব মো. আসাদুল বাকি বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব জেলে জাটকা নিধনে মগ্ন হচ্ছে তাদের অভিযানে আটকের মাধ্যমে আপাতত জেল জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮৯ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১ জনকে ২ বছর, ৮১ জনকে ১ বছর, ৭ জনকে ১ মাস করে জেল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনেকের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আমাদের কাছে তাদের ২টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দ রয়েছে। তবে অসাধু জেলেদের ব্যাপারে আমাদের এখানেই শেষ নয়। আটককৃত জেলেদের তালিকা রেখে আমরা জেলা টাস্কফোর্সের সভায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। যাতে এদের দেওয়া জেলে কার্ড বাতিল করা হয়।

তিনি আরও বলেন, জাটকা নিধন থেকে জেলেদের নিবৃত্ত রাখা কঠিন কাজ। হয়তো এক সময় আসবে তারা পুরোপুরি বুঝতে পারবে। তারা হালদা নদীর কথা চিন্তা করবেন। সেখানে জেলেরা এখন নিজেরাই পাহারা দেয়। আমরা আশাবাদী হয়তো এমন একটা সময় আসবে যখন ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে আমাদের মেঘনাপাড়ের জেলেরা নিজেরাই নদী পাহারা দেবে। এতটুকু সময় পর্যন্ত আইন প্রয়োগ করতে আমাদের কষ্ট করতে হবে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান বলেন, জেলার প্রায় ৫১ হাজার জেলে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চার মাস চাল পাচ্ছেন। এর পরেও কোনো জেলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চললে তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা, মেঘনা অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads