• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মাকে ভিখারি বানাল ছেলেরা!

আজেদা খাতুন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মাকে ভিখারি বানাল ছেলেরা!

  • ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ এপ্রিল ২০১৯

আজেদা খাতুন। বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে। স্বামী মারা গেছে ৪-৫ বছর আগে। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। খাওয়াদাওয়াও মিলে না তেমন একটা। কানে কম শোনেন। চোখেও ঠিকমতো দেখতে পান না। অসুখে পড়ে থাকলেও ছেলেমেয়েরা কেউ দেখে না। তাই তো বড় ২ ছেলে মোজ্জাম্মেল ও মফিজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে হাজির হয়েছিলেন বৃদ্ধা আজেদা বেগম। অভিযোগ- স্বামীর দেওয়া ২২ বিঘা জমি কৌশলে বড় ছেলে হাতিয়ে নিয়ে এখন মায়ের খোঁজখবর নেয় না। উপায়ান্তর না পেয়ে বৃদ্ধা আজেদা বিচারের দাবিতে এখন ঘুরছেন চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে। ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামে মৃত বজির উদ্দীনের বিধবা স্ত্রী আজেদা খাতুন (৮০)। স্বামীর জীবদ্দশায় সুখের সংসার ছিল তার। স্বামী বজির উদ্দীন হাসকিং মিলে ব্যবসা করতেন। জমিজমাও ছিল প্রায় ১০০ বিঘা। তার ছিল ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় ছেলে মোজ্জামেল হক (৫২), মেজো ছেলে মফিজুল হক (৪৫) এবং ছোট ছেলে হাফিজুল হক (৩৫)। ছেলেমেয়েরা সবাই বিবাহিত। স্বামী বজির উদ্দীন তার জীবদ্দশায় স্ত্রীর নামে ২২ বিঘা জমি লিখে দেন। ওইসব জমির ফসল থেকে আজেদার জীবন ভালোই চলত। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার ৩ বছর পর ওই জমির ওপর চোখ পড়ে তার ২ ছেলে মোজাম্মেল ও মফিজুলের। তারা মাকে ভুল বুঝিয়ে ২ বছর আগে কৌশলে ওই জমি লিখে নেয়।

কথা ছিল মাকে আমৃত দেখাশোনা করবেন তার ওই ২ ছেলে ও বউমারা। কিন্তু জমি নেওয়ার পর ছেলে বউমাদের চরিত্র পাল্টে যায়। এখন তারা বৃদ্ধা আজেদাকে ঠিকমতো দেখাশোনা করে না। খেতেও দেয় না তারা। অসুখ বিসুখে ওষুধ কিনে দেয় না। অনাহারে অর্ধাহারে থেকে থেকে বৃদ্ধা আজেদা এখন ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। কানে কম শোনেন। চোখেও ঠিকমতো দেখতে পান না। এ অবস্থায় মায়ের খোঁজখবরের পরিবর্তে কয়েক মাস ধরে মায়ের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক  নির্যাতনসহ কারণে অকারণে করছে গালাগাল। তাই তিনি ওই ২ ছেলের আচার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহজাহান আলীর কাছে গত শনিবার হাজির হন শালিস নিয়ে।

চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী তাৎক্ষণিকভাবে তার বড় ছেলে মোজাম্মেল হককে ফোন করলে সে উত্তর দেয় মায়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। বড় ছেলের কাছে এরূপ উত্তর পেয়ে তিনি ছোট ছেলে হাফিজুলকে ডেকে তার মাকে তুলে দেন। বিধবা আজেদা এখন তার ছোট ছেলের হেফাজতে রয়েছেন।

জমিজমা লিখে নেওয়ার ব্যাপারে চেয়ারম্যান শাহজাহান জানান, অভিযোগ সত্য। যারা জমি লিখে নিয়েছে তারা আসলে ওই বৃদ্ধার খোঁজখবর নেয় না। তিনি বলেন, বৃদ্ধার স্বামী ছিল ধনবান ব্যক্তি। স্ত্রী একসময় অনেক পয়সা নাড়াচাড়া করেছেন। এখন তার দুর্দিন। শরীরও চলে না, জমি জায়গাও নিয়ে নিয়েছে ছেলেরা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেব। ছোট ছেলে হাফিজুলের বিরুদ্ধ অভিযোগ নেই বৃদ্ধার। তিনি বলেন, আমার জমি-জমাগুলো থাকত তবে জমির ফসল বিক্রি করে আমি ভালোভাবে চলতাম। প্রয়োজনে একজন কাজের লোক রাখতাম। কিন্তু জমিজমা নিয়ে আমাকে এখন ভিখারি বানিয়েছে ২ ছেলে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধার স্বামী মৃত বজির উদ্দীন প্রায় ১০০ বিঘা জমি ছিল। তিন ছেলে মিলে ভাগ করে নেয় সেসব জমি। স্থানীয়রা বলেন, ওই এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মৃত বজির উদ্দীন। এত জায়গাজমি থাকার পরও তার ছেলেরা মায়ের খবর রাখছে না। এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছেলে মোজ্জামেল হক মায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মায়ের অভিযোগ সত্য নয়।  ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বলেন, মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলেদের বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করেছি। ছেলে ও বউমারা বৃদ্ধার দায়িত্ব নিবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু কথা রাখেনি। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেড আরিফ বেগ জানান, বৃদ্ধা আজেদার খবর স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পেয়েছি। কোনো ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণ-পোষণ না দিলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তার ওপর জমিজমা হাতিয়ে নিয়ে দেখাশোনা না করার অভিযোগ গুরুতর। স্থানীয়ভাবে ছেলেরা মায়ের দায়িত্ব না নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads