• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
পহেলা বৈশাখের চাহিদা মেটাতে মজুদকৃত ইলিশেই ভরসা ব্যবসায়ীদের

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

পহেলা বৈশাখের চাহিদা মেটাতে মজুদকৃত ইলিশেই ভরসা ব্যবসায়ীদের

  • এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০১৯

সাগর উত্তাল ও কাল বৈশাখী ঝড়ের কারণে সমুদ্রগামী জেলেরো নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে বছরের এই সময়টা জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজ করেন। ফলে সাগরে মাছ থাকলেও জেলেদের আনাগোনা থাকেনা বললেই চলে। তাই বাগেরহাটে এবার মজুদকৃত ইলিশ মাছ দিয়েই পহেলা বৈশাখে চাহিদা মেটাচ্ছেন মৎস্য আড়তদারসহ পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

সারা দেশের মত বাগেরহাটে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে বেশিরভাগ মানুষই পান্তা-ইলিশ খেতে আগ্রহী থাকেন। আর এ সুযোগটাই নেন ব্যবসায়ীরা। পহেলা বৈশাখের ইলিশের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভের আশাতেই ব্যবসায়ীরা মজুদ করেন ইলিশ। পহেলা বৈশাখের ২/১ দিন আগে থেকেই এসব মাছ ছাড়া হয় বাজারে। বাগেরহাটের প্রধান মাছের আড়ত কেবি বাজারে গিয়ে আড়তদার ও পাইকার বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে এ তথ্য।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল ৬টা থেকে কেবি বাজার মৎস্য আড়তে শুরু হয় মাছ কেনা বেচা। প্রায় দুই ঘন্টা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকের মধ্য দিয়ে চলে এই বাজার। দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারি মাছ বিক্রির ঐতিহ্যবাহি বাজার এটি। খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে খুচরা বিক্রেতা আসেন এখানে মাছ কিনতে। মৌসুমের সময় প্রতিদিনই প্রায় কয়েক টন ইলিশ বিক্রি হয় এ বাজারে। পাইকারি মাছ বিক্রির পুরাতন বাজার হলেও এবারের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে কেবি বাজারে ইলিশ বোঝাই করে সাগর থেকে নতুন করে ভিড়ছে না কোন ট্রলার। মূলত সাগর ও নদী এসময় উত্তাল থাকার কারনে জেলেরা নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে এসময়টাকেই তাদের মাছ ধরার উপকরন জাল ও ট্রলার মেরামতের উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নেয়। বছরের সব থেকে বেশী দাম ও চাহিদা থাকা সত্বেও পহেলা বৈশাখে কোল্ড স্টোরে মজুদকৃত ইলিশের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এদিকে চাহিদার কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে ইলিশের দাম বৃদ্ধি করেছেন ব্যবসায়ীসহ আড়ৎদারা। দাম বাড়ানো হয়েছে নিষিদ্ধ জাটকা ইলিশের। জাটকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ টাকা। এছাড়া ৫শ থেকে ৬শ গ্রামের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ শ থেকে ৭শ টাকায়। তবে কেবি বাজারে এই সাইজের বড় ইলিশের দেখা মেলা ভার।

এছাড়া বাগেরহাট সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারসহ ছোট-খাট হাটবাজারে এখন সব ধরনের ইলিশের কদর বেশি। এ কারনে এসব বাজার গুলোতে জাটকা ইলিশের দেখা মিলছে বেশি। বছরের এ সময়টা ইলিশের দাম কিছুটা বেশি হলেও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে পান্তা-ইলিশের ভক্তরা তাই জাটকা দিয়েই তাদের চাহিদা মেটাতে চায়।

বাগেরহাট মাছ বাজারের বিক্রেতারা বলেন, নতুন করে কোন মাছ না আসায় আমরা মজুদকৃত ইলিশ দিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছি। কোল্ড স্টোরের মজুদকৃত মাছ, তাই দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। এছাড়াও বাজারে পিরোজপুর থেকে আনা সামান্য কিছু তাজা মাছ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর দাম আকাশ ছোয়া।

বাগেরাট বাজারে মাছ কিনতে আসা এনজিও কর্মী মামুন আহমেদ বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বছরের এ সময়টা ইলিশের দাম বেড়ে যায়। তারপরও বাসার সবার চাহিদার কথা চিন্তা করে যে ইলিশই হোক কিনে ফিরতে হবে। তবে বড় ইলিশের দাম অনেক বেশি।

উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা বলেন, বছরে এ সময়টায় জেলেরা তাদের জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যাস্ত থাকেন। এ কারনে নদী বা সাগরে মাছ থাকলেও সেই পরিমান জেলেরা নদী বা সাগরে মাছ ধরছে না। আর এ কারনেই বাগেরহাট কেবি বাজারে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নতুন কোন মাছ আসছে না। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা যে মাছ গুলো কোল্ড স্টোরে মজুদ করেছিল সেগুলো এখন বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

বাগেরহাট কেবি মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সাধারন সম্পাদক কুমার অনুপ বিশ্বাস বলেন, গত কয়েকদিনে কোন মাছ ধরা ট্রলার কেবি বাজারের ঘাটে ভেড়েনি। তাই তাজা ইলিশ এই বাজার থেকে বিক্রি হয়নি। তবে কিছু কোল্ড স্টোরের ইলিশ এসেছিল। সেগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শুনেছি খুচরা বাজারে পিরোজপুর থেকে কিছু ইলিশ এনে বিক্রি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads