• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
সরাসরি অংশ নেয় ৫ জন

নুসরাত জাহান রাফি

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

নুসরাত হত্যা

সরাসরি অংশ নেয় ৫ জন

  • ফেনী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যায় সরাসরি পাঁচজন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক (ওসি) মো. শাহ আলম এ তথ্য জানান। পিবিআই সূত্র জানায়, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে যে পাঁচজন সরাসরি অংশ নেয় তারা হলো শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেন, উম্মে সুলতানা পপি ও কামরুন নাহার মনি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ২৫ জন জড়িত।

এ ঘটনায় ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে মামলার অন্যতম আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। জবানবন্দিতে তারা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছে।

শাহাদাত হোসেন শামীম বলে, মামলা প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানালে তিনি নিজে পেছন থেকে এক হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে ও অন্য হাত দিয়ে হাত ধরে। উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতের পা ধরে। জান্নাত আফরোজ মনি নুসরাতের শরীর চেপে ধরে। মনি শামীমের চাচাতো বোনের পালিত মেয়ে। তারা তিনজন মিলে নুসরাতকে ছাদের মেঝেতে ফেলে দেয়। পরে উম্মে সুলতানাকে কৌশলে তারা চম্পা বলে ডাক দেয়।

শামীম বলেছে, নুসরাতকে মেঝেতে শুইয়ে ফেলার পর জোবায়ের নুসরাতের ওড়না দুই টুকরো করে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলে। জাবেদ তখন নুসরাতের সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। এরপর শামীমের চোখের ইশারায় জোবায়ের তার পকেট থেকে দেয়াশলাই বের করে কাঠি জ্বালিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর পাঁচজনই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। নামতে নামতেই তিনজন ছাত্র তাদের বোরকা খুলে শরীরের কাপড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। ছাত্রী দুজন মাদরাসায়ই তাদের পরীক্ষার হলে চলে যায়। বাকি তিনজন নিজেদের মতো করে পালিয়ে যায়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিঁড়ি দিয়ে ওই পাঁচজন যখন নামছিলেন তখন নুসরাতের আগুন, আগুন, বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার তারা শুনতে পায়। পা থেকে আগুন ধরানোয় প্রথমে নুসরাতের পায়ের বাঁধন খোলে। এরপর আগুন যখন ওপরে উঠে তার হাতের বাঁধন খুলে তখনই তিনি উঠে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। নুসরাতের মুখ শামীম চেপে ধরায় সেখানে আর কেরোসিন ঢালা হয়নি। তাই পুরো শরীর পুড়লেও মুখে আগুন লাগেনি।

গত ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। আগুন লাগানোর আগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা। তাতে কাজ না হওয়ায় আগুনে নুসরাতকে ঝলসে দেওয়া হয়। পরে নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান।

এ হত্যাকাণ্ডে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনেরও সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। অভিযোগ রয়েছে, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহল আমীন অধ্যক্ষের আস্থাভাজন। ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দ্দৌলা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অভিযুক্ত অধ্যক্ষ নুসরাতের মায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি সিরাজ উদ দ্দৌলার স্ত্রী সম্প্র্রতি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের হাতে তুলে দিয়েছেন। পরে রুহুল আমিন নিজেই এসব টাকা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বিভিন্নজনকে সরবরাহ করেন। প্রাথমিকভাবে পাওয়া এসব তথ্য চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি ছিলেন সিরাজ উদ দৌলা। জেলখানা থেকেই অধ্যক্ষ নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দেন তার ঘনিষ্ঠদের। পরে তারা সেটা বাস্তবায়ন করেন। সিরাজ উদ দৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে

অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে ৭ দিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে ৫ দিন, জাবেদ হোসেনকে ৭ দিন, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, আবছার উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের হোসেনকে ৫ দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে গত সোমবার রাতে গ্রেফতার হওয়া কামরুন নাহার মনিরও গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মনি সোনাগাজী বাসস্ট্যান্ডের ঈমান আলী হাজী বাড়ির মরহুম আজিজুল হকের পালিত মেয়ে। তিনি নুসরাতের সহপাঠীও। ঘটনার দিন মাদরাসার গেট পাহারা দেওয়া শরীফকে গতকাল ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িত পরোক্ষদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

শ্লীলতাহানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ায় সোনাগাজী থানার ওই সময়ের ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। এ মামলাও তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads