বছর দেড়েক আগে ভবন নির্মান সম্পন্ন হলেও মাত্র ১১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারনে চালু হচ্ছে না বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ১৫০ শয্যার এ ভবনটি কোন কাজে আসছে বাগেরহাটবাসীর। স্বাস্থ্য ও গনপূর্ত বিভাগের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় এ জেলার মানুষ। বহুল কাক্সিক্ষত বাগেরহাট জেলার সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল চালুর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। হাসপাতালটি চালু হলে জেলার স্বাস্থ্যসেবায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।
বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের কোলঘেষা বাগেরহাট জেলার প্রায় ১৭ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার কেন্দ্রস্থল সদর হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৩ সালে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। একই বছর জুন মাসে “হেলথ পপুলেশন এন্ড নিউট্রেশন সেন্টার ডেভলমেন্ট প্রজেক্ট”এর আওতায় শুরু হয় আধুনিক চিকিৎসার উপযোগী ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মান কাজ শেষ হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হাসপাতাল ভবনটি হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। দুই বিভাগের মধ্যে কয়েকদফা পত্র আদান প্রদানও হয়েছে ইতোমধ্যে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ভবনটি বুঝে নিচ্ছেন না বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ।
এলাকাবাসীরা বলেন, নির্মান কাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়েছে ভবনটি। এটি চালু হলে, উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে জেলার বাইরে যেতে হবেনা রোগীদের। আমরা দ্রুত এই ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছি।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মতলেব মিয়া বলেন, আমরা চাই দ্রুত হাসপাতালটি চালু হোক। আমরা উন্নত সেবা পাব।
রোগীর স্বজন মহিবুন্নাহার বলেন, ২৫০ শয্যা হাসপাতাল বাগেরহাটবাসীর স্বপ্ন ছিল। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ভবন নির্মান হলেও, সেবা পাচ্ছি না আমরা। এ হাসপাতালটি চালু হলে মানুষ উন্নত সেবা পেত।
জামশেদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহাদয়ের কাছে আবেদন করছি যাতে দ্রুত এ হাসপাতালটি চালু হয়। তাহলে আমরা উপকৃত হব।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাগেরহাটবাসীর একটু বড় ধরণের কোন সমস্যা হলে খুলনাসহ বড় শহরে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে হয়। আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি চালু হলে এখানেই পর্যাপ্ত সেবা পেতাম। আর দূরে যাওয়া লাগত না।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, ভবন নির্মানের সময় যে অস্থায়ী মিটার ছিল, তার বিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিয়েছে। বর্তমানে বকেয়া বিলের মিটারটি সিভিল সার্জন মহদয়ের নামে রয়েছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান বলেন, ১১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে আমরা ভবনটি বুঝে নিতে পারছি না। এ বিষয়টি আমরা উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ভবন বুঝে নেয়ার আগের বিদ্যুৎ বিল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরিশোধের কোন সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মান কাজ দেড় বছর আগে শেষ হলেও, স্বাস্থ্য বিভাগ ভবনটি বুঝে নিচ্ছে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষে তাদের অস্থায়ী মিটারের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে। সিভিল সার্জনের নামের মিটারে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি পরস্পর সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করে দ্রুত হস্তান্তরের জন্য চেষ্টা চলছে।