• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কলমাকান্দায় সংখ্যালঘুর ঘর দখলের পাঁয়তারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

কলমাকান্দায় সংখ্যালঘুর ঘর দখলের পাঁয়তারা

  • কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৯

এক বছরের জন্য ঘর ভাড়া দিয়ে বিপদে পড়েছে সংখ্যালঘু ঘর মালিক। চুক্তি অনুযায়ী এক বছর শেষ হলেও ঘর ছাড়ছে না ভাড়াটিয়া। উল্টো মামলাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এবার ঘর মালিকের নামে একটি আদালতে মামলা করে নিজেই দোকান ঘর দখলের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে। 

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছয় বারের নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাসাউড়া গ্রামের সতিশ চন্দ্র সাহার ছেলে সুকুমার সাহা রায় অরফে রঞ্চু গত রোববার স্থানীয় সংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হল রুমে সাবেক সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এক সামাজিক সালিশ দরবার অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত ঘর ভাড়াটিয়া ওই দরবারে উপস্থিত না হয়ে দরবার প্রত্যাখান করে উপস্থিত সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে বলে জানান দরবারিরা।

ওই সালিশি দরবারে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আজাদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুলতান গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলী বিশ্বাস, বণিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সম্পাদক কাজল দে সরকার, ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সম্পাদক সুজন সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস, বিজয় চন্দ্র তালুকদার, সতিশ মল্লিক, অজিত রায়, সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মো.কামাল পাশা, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সেলিম ও সম্পাদক পলাশ কান্তি বিশ্বাস প্রমূখ।

এছাড়াও সামাজিক সালিসী দরবারে এলাকার নানা শ্রেণি পেশার হাজারো লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ লোকজন ও ব্যবসায়ী সমাজে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

সূত্র জানায়, কলমাকান্দা উপজেলা সদরের মধ্য বাজারের মৃত মাহবুব মিয়ার ছেলে জহিরুল ইসলাম মোস্তফাকে এক বছরের জন্য দোকান ঘরটি ভাড়া দেন। চুক্তি অনুযায়ী এক বছর পার হওয়ার পরও ঘর না ছেড়ে উল্টো দোকান মালিক সুকুমার সাহা রায়ের নামে আদালতে একটি মামলা করেন। 

গত রোববার ঘর মালিক সুকুমার সাহা রায় স্থানীয় সংবাদিকদের জানান, মোস্তফা আমার ঘরে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল কিন্তু হঠাৎ করে সে আমার ঘর ও ভূমির মালিকানা দাবী করে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালায় তা শোনার পর চুক্তিপত্র অনুযায়ী ঘর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে আমি তার কাছে আর ভাড়া দেবনা বলে জানাই। পরে সে ঘর না ছাড়িয়া তাল বাহানা শুরু করলে এক পর্যায়ে তৎকালিন সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের নেতৃত্বে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে সামাজিক সালিশ দরবার বসে। আমি মোস্তফার নিকট ঘর ভাড়া দেবনা বলে সালিশ দরবারে উপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট বলি। তারপর দরবারে মোস্তফা পুনরায় নতুন করে এক বছরের জন্য ঘরটি ভাড়া নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি তা প্রত্যাখান করি। কিন্তু উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সুপারিশে নতুন করে জামানত ছাড়া এক বছরের জন্য লিখিত চুক্তিনামা করে ৩০ শে চৈত্র ১৪২৫ বাংলা পর্যন্ত ঘরটি ভাড়া দেই। ঘর ছাড়ার সময় শেষ হওয়ার দুই দিন পূর্বেই নেত্রকোনা জেলা বিজ্ঞ আদালতে একটি মিথ্যা অভিযোগ করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আমাকে একটি নোটিশ পাঠিয়ে দেয়। আমরা সংখ্যালঘু বিধায় বিভিন্ন কুট কৌশলে বিহারী মোস্তফা আমার ঘরটি বেদখল করার জন্যই তার নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের স্বাক্ষী রেখে এ মামলাটি দায়ের করে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি আশা করি  আদালতে ন্যায় বিচার পাব। 

ঘর ভাড়াটিয়া জহিরুল ইসলাম মোস্তফা'র  নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে  তিনি বলেন, আমার যা বলার আদালতের মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে বলেছি। এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নাই। 

এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলেন জহিরুল ইসলাম মোস্তফা অরফে বিহারী মোস্তফার বাবা ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পেয়ে বিহারী মাহবুব দুনকুর আশপাশের লোকজনকে ডেকে এনে আনন্দ ফূর্তি ও মিষ্টি বিতরণ করেন। সতিশ চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ও প্রেরনা।

কলমাকান্দা বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা বলেন আমরা সংখ্যালঘু আমারা ঘর ভাড়া দিলে যদি জোর করে দখল করে নেয়। তাহলে আমরা কিভাবে চলব। এতে করে বাজারে  ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে ঘর সংকট দেখা দিবে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ব্যবসায়ী ও আমজনতার সামাজিক সালিশ দরবারে মাধ্যমে একটি দাবি উঠেছে  কলমাকান্দা বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতি'র সভাপতি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সমাজচ্যুত করার জন্য।  এ বিষয়টি আমরা ব্যবসায়ী সমিতি উদ্যোগ নেবো।   

সালিশ দরবারের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস বলেন গত দরবারে উপস্থিত থেকে আমি মধ্যস্থতায় ভাড়াটিয়া মোস্তফাকে জামানত বিহিন ঘরটি এক বছরের জন্য সুকুমার সাহা রায় অরফে রঞ্চু’র কাছ থেকে লিখিত চুক্তিনামা করে ভাড়া নিয়ে দেই। চুক্তিনামা অনুযায়ী ঘরটি ৩০ শে চৈত্র ১৪২৫ বাংলা সনে মালিককে ঘরটি বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা না করে ঘর মালিকের বিরুদ্ধে উল্টো একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে মোস্তফা। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মীমাংসার লক্ষে একটি সামাজিক সালিশ দরবার ডাকা হলে সেখানেও তিনি আসেনি মোস্তফা ।এ নিয়ে এলাকার সাধারণ লোকজন ও ব্যবসায়ী সমাজে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলেও তিনি জানান। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads