• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সোনারগাঁয়ের ব্যতিক্রমী পাগলা গাছের লোকজ মেলা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

সোনারগাঁয়ের ব্যতিক্রমী পাগলা গাছের লোকজ মেলা

  • সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৯

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার হামছাদী গ্রামে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে পাগলা গাছের মেলা। একটি গাছের খুঁটিকে কেন্দ্র করে এ ব্যতিক্রমধর্মী মেলা উদযাপন হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। প্রতিবছর ১ ও ২ জৈষ্ঠ্যে বসে এ মেলা। যা পাগলা গাছের মেলা হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।

স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, প্রায় ৫০০ বছর আগে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা আপন দুই সহোদর ফনি সেন ও সুরেন্দ্র সেন নিজেদের বাড়িতে ঘর তৈরি করার জন্য বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) থেকে ২০টি গাছের খুঁটি কিনে আনেন। রাতে ঘুমের মধ্যে দুই ভাই স্বপ্নে দেখেন দুটি খুঁটি দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। খুঁটি দুটি পাগল রূপ ধারন করে দুই ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলছে, 'আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা করো। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে”।

স্বপ্ন দেখার পরের দিন দুই ভাই মিলে তাদের বাড়ির সামনের পুকুরের পানিতে খুঁটি দুটি ডুবিয়ে রাখে। পরের বছর থেকে খুঁটিগুলোকে দেবতা মনে করে পূজা-অর্চনা করা শুরু করেন। সেই থেকে এলাকার সনাতন ধর্মের লোকজন খুঁটি দুটিকে প্রতি বছর ১ জৈষ্ঠ্য বিশেষ পূজা-অর্চনা করে আসছে। প্রায় ২০০ বছর আগে দুটি খুঁটির মধ্যে একটি পুকুর থেকে হারিয়ে যায়। পাগলা গাছের ভক্তরা প্রতি বছর ১ ও ২ জৈষ্ঠ্য এ দুদিন পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে এর উপর বিভিন্ন। তা ছাড়া ফল-ফলাদি, ঘি, খাসি ও পাঠাবলি দিয়ে উৎসর্গ করে। পূজা শেষে খুঁটিটি আবার ওই পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার মেলায় গিয়ে দেখা যায়, পাগলা গাছের ভক্তরা পুকুর থেকে খুঁটিটি তুলে খুটির উপর দুধ ঢেলে, তার উপর বিভিন্ন ফল ফলাদি দিয়ে পূজা-অর্চনা করছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলমান নারী-পুরুষরা রোগ থেকে মুক্তি পেতে ও মনের বাসনা পুরন করতে গাছের খুঁটির উপর দুধ ঢেলে সেই দুধ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাখছে। পুরো গাছের উপর রাখা হচ্ছে রকমারী ফল। গাছের উপর মুসলমান নারীপুরুষদের পাশাপাশি তাদের শিশু সন্তানদের লেখাপড়ায় ভালো করার ও রোগ থেকে মুক্তি পেতে গাছের খুঁটির উপর ফল ও দুধ ঢেলে বিভিন্নভাবে গাছের আর্শিবাদ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুজা অর্চনার পাশাপাশি হামছাদী গ্রামে বসেছে তিনদিনের লোকজ মেলা।

মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, দোকানিরা পসরা নিয়ে বসেছেন। তা ছাড়া মেলায় নাগরদোলা, বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি, প্লাস্টিকের খেলনা, মিষ্টির দোকান বসেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুণ্যার্থীরা মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য ওই এলাকায় তাদের স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।

হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা মিঠু মিয়া জানান, এ মেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এ গ্রামের হিন্দু ধর্মের লোকজনের পাশাপাশি প্রতি বছর মুসলমান মানুষের বাড়িতে বিভিন্ন স্থানের আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসে। মেলা উপলক্ষে হিন্দু মুসলমান একত্রিত হয়ে যায়।

পূজা কমিটির সভাপতি কেশব চন্দ্র দাস বলেন, এবারের মেলায় বিপুলসংখ্যক ভক্তের আগমন ঘটেছে। মেলা শান্তিপূর্ণভাবে করার লক্ষ্যে এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গীতা পাঠ, কীর্তনসহ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশিত হচ্ছে। প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো এ মেলায় সব ধর্মের লোকজনের মিলন মেলা আমাদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। পূজার দিন বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলমান মানুষ তাদের স্বজনদের রোগ মুক্তি ও মনের বাসনা পুরনের জন্য এখানে এসে ভিড় জমায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads