• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মধুমাসেও আমের রাজধানী আমশূন্য!

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

মধুমাসেও আমের রাজধানী আমশূন্য!

  • রাজশাহী ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২৩ মে ২০১৯

হিসেবের মারপ্যাঁচে এবার এখনো আমের রাজধানী রাজশাহী ‘আমশূন্য’। ঈদের পর একচেটিয়া বাজার দখলে নিতে বেঁধে দেওয়া সময়ের পরও আম পাড়া হচ্ছে না। প্রতি বছর মধুমাস জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিন থেকেই রাজশাহীতে শুরু হয় আম পাড়া। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত সময় মেনে অনেকেই আগাম গুটি জাতের আম পাড়েন গাছ থেকে। কিন্তু এরপরও এবার আমের রাজধানী রাজশাহী এখনো আমশূন্য।

সব দিক আলাচনায় জানা যায়, কথা ছিল ২০ মে থেকে জাত আম গোপালভোগ পাড়া হবে বাগান থেকে। কিন্তু সেখানেও ব্যতিক্রম! বলতে গেলে কেউই গোপালভোগ আম পাড়েননি।

যেখানে প্রতি বছর আমের মৌসুমে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ না আসতেই তড়িঘড়ি করে আম পাড়া শুরু হয়ে যায়, সেখানে এবার ব্যত্যয় কেন? প্রশ্ন জাগতে পারে। তার সহজ উত্তরে আম চাষিরা বলছেন, জেলা প্রশাসন ছক কষে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দিলেও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বিভিন্ন জাতের আম এখনো গাছে পরিপক্বতা পায়নি। এর ওপর দাবদাহের মধ্যে রমজান মাস চলছে।

ফলে আমের পরিপক্বতার এই সময়টাকে মুনাফা হিসেবেই দেখছেন তারা। সাধারণত রমজান মাসে আমের ব্যবসায় ভাটা থাকে। আর আমের পরিপক্বতায় আরো সময় হাতে আছে। তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ঈদের পর মৌসুমের পুরো বাজারটা ধরতে চান রাজশাহীর আমচাষিরা।

রাজশাহীর ছোটবনগ্রাম এলাকার আমচাষি ও ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী এখনো অনেক গাছ থেকে আম নামানো যাবে। কিন্তু গাছে রাখলেও ক্ষতি নেই, বরং লাভই আছে। একদিকে আমে পরিপক্বতা আসবে অন্যদিকে ঈদের পরের বাজারে কেবল আমই থাকবে। তরমুজ ও লিচুসহ অন্য মৌসুমি ফল শেষের দিকে যাবে। ফলে বাজারে তখন কেবলই আমের রাজত্ব থাকবে। এতে ব্যবসাও জমে উঠবে, মুনাফাও বাড়বে।

পবার মথুরা গ্রামের আমচাষি নূরুল আমিন বলেন, রমজান মাসে গাছ থেকে আম নামানোর জন্য শ্রমিক সংকট থাকে। এর ওপর ধান কাটারও মৌসুম চলছে। তার ওপরে আবার দাবদাহ। আর গাছে আম থাকলে যেহেতু এখন অসুবিধা নেই, তাই সবাই একটু সময় নিচ্ছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর ছাড়াও শহরের শালবাগান ও নওদাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে আমের হাট একদম ফাঁকা। তরমুজসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলে এখনো ভরে আছে প্রতিটি আড়ত। এই আড়তগুলোই গত বছর আমে ভরা ছিল। 

সময় বেঁধে দেওয়া ও আম পাড়া প্রসঙ্গে রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিম উদ্দিন বলেন, সময় বেঁধে দেওয়ায় কোনো ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে গাছে এখনো আম পরিপক্ব হচ্ছে, এটা হতেই পারে, যা স্বাভাবিকভাবে দেখা উচিত। চাষিরা ইচ্ছে করলে পাড়তে পারবেন আবার কিছুটা বিলম্বও করতে পারবেন। ভেবে দেখলে আমচাষি ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

এদিকে রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটিজাতের আম। এবার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে গুটি আম নামাতে পারছেন চাষিরা। আর উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রাণীপছন্দ ২৫ মে, খিরসাপাতা বা হিমসাগর ২৮ মে এবং লক্ষ্মণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৬ মে থেকে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৬ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১৭ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা জাতের আম।

তবে কোনো গাছের আম আগে পাকলে নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তা জানাতে হবে। তারা পরিদর্শন শেষে মতামতের ভিত্তিতে ওই গাছ থেকেও নামানো যাবে আম।  

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আবদুল কাদের বলেন, বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কেবল গাছে পাকলেই যে কোনো জাতের আম পাড়তে পারবেন চাষিরা। আর বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ীও আম নামাতে পারবেন গাছ থেকে। যদি কোনো আম আগেই পেকে যায় তবে সেই সম্পর্কে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানাতে হবে।

তিনি বাগান পরিদর্শন করে আম পাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই চাষিরা তাদের গাছ থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেও আম নামাতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

আম পাড়ার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শামসুল হক জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাবদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না এলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads