• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বিরল রোগে আক্রান্ত বাবা-মেয়ে

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

বিরল রোগে আক্রান্ত বাবা-মেয়ে

  • কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০১৯

এ যেন এক পাথর-মানব। হাতের ভেতর (আঙুল ও তালু) এবং পায়ের তলা যেন পাথর দিয়ে বাঁধাই করা। শক্ত ও খসখসে। অনেক পুরো। হাতের তালু ও পায়ের পাতার চামড়া শক্ত হয়ে টুকরো-টুকরো হয়ে প্রায়ই খসে পড়ে। অসহ্য যন্ত্রণায় রাতে ঘুম আসে না। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিলেও এই রোগ যেন সারছেই না। রোগাক্রান্ত ব্যক্তিটি উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের একসময়ের পত্রিকা বিক্রেতা (হকার) রাখাল দাস (৩৪)।

যত সময় যাচ্ছে তত যেন অজ্ঞাত রোগটি আরো বেড়েই চলেছে। এ রোগটি এখন তার ১৪ বছর বয়সী অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সম্পা দাসেরও। কীভাবে হচ্ছে কেন হচ্ছে কেউই বলতে পারছে না। ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্রে এই রোগকে ‘হাইপারকেরাটসিস’ উল্লেখ করলেও কোনো ওষুধে রোগটি নিরাময় হচ্ছে না।

রাখাল দাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার মা নিবা রানী দাসের এই রোগ ছিল। তিনি বছর তিনেক আগে মারা গেছেন। রাখাল দাসও জন্মের পর থেকে এই রোগে ভুগছেন। শৈশব থেকে চিকিৎসা নিলেও ‘অজ্ঞাত’ এই রোগটি থেকে নিরাময় পাননি। বরং আগের চেয়ে রোগের বিস্তৃতি আরো বেড়েছে। হাত-পায়ের ব্যথার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। পৈতৃক কোনো ভিটেমাটি না থাকায় দরিদ্র রাখাল দাস তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশী অসিত দাসের বাড়িতে বসবাস করছেন। সংসার চালাতে একসময় সংবাদপত্র বিক্রি করতেন। পরিবারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্র বিক্রি বাদ দিয়ে ফেরি করে মোমবাতি-আগরবাতি বিক্রি করা শুরু করেন। ‘অজ্ঞাত’ এই রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে গিয়ে নিজের পুঁজিটুকুও শেষ হয়ে গেছে। এখন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালাতে হয়। প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র থাকলেও প্রতিবন্ধী ভাতা বঞ্চিত।

এদিকে মেয়ে সম্পা দাস উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের বিমলাচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছেলে রাজু দাস একই বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মেয়ে একই রোগে আক্রান্ত দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন রাখাল। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তার শঙ্কা বাড়ছে। সংসার চালানো যেখানে তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না সেখানে এই জটিল রোগের চিকিৎসা করানোটা তার কাছে অকল্পনীয়।

রাখাল দাস বলেন, জন্মের পর থেকে এই রোগে ভুগছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। মেয়েকেও এই অজানা রোগে আক্রমণ করেছে। এই রোগের চিকিৎসা আছে কি না, থাকলে কত টাকা খরচ হবে, তাও জানি না। বাপ-মেয়ে সুস্থ জীবন ফিরে পেতে এখন প্রধানমন্ত্রীসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা চান।

উত্তরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক বলেন, রাখাল দাস আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি জন্মের পর থেকে অজানা এই রোগে আক্রান্ত। তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েরও একই রোগের লক্ষণ দেখা গেছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে এখন মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাচ্ছেন। সহযোগিতা পেলে বাবা-মেয়ের জীবন বেঁচে যেতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads