• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
৪৩ বছরের ‌প্রতারণার ক্যারিয়ার

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

৪৩ বছরের ‌প্রতারণার ক্যারিয়ার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০১৯

দশকের পর দশক ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে প্রতারণা। উপার্জন করেছে শতকোটি টাকা। ঢাকা শহরে রয়েছে ফ্ল্যাট-গাড়ি। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লাতে জমি-জমাসহ অঢেল সম্পত্তি মালিক হয়েছেন। এখানে বলা হচ্ছে প্রতারক সম্রাট বারেকের কথা। তার কোম্পানির নাম আরসিডি। যার প্রকৃত নাম রয়্যাল চিটার ডেভেলপমেন্ট। এ নামে অফিস নেওয়াসহ সব কার্যক্রম চালিয়ে এলেও প্রকৃত নামটি ছিল অজানা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরসিডির ছোট ছোট গ্রুপ রয়েছে। যারা সুসজ্জিত অফিস ভাড়া করে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।

গত ৪৩ বছর ধরে প্রতারণা করে আসা বারেককে গত শনিবার রাতে রাজধানীর দারুসসালাম এলাকা থেকে পাঁচ সহযোগীসহ আটক করে র্যাব-৪। এ সময় বারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। আটক অন্যরা হলো- হাবিবুর রহমান (২৪), জাকির হোসেন (৫৮), আক্তারুজ্জামান (২৮) ও শাহরিয়ার তাসিম (১৯)। এর আগে গত ২ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চক্রের ২২ সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূল হোতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয় বলে গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।

বারেকের চক্র ন্যূনতম ১০-৫০ লাখ টাকার প্রতারণা করত জানিয়ে র্যাব-৪-এর সিও বলেন, চক্রটি মূলত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবসরের আগে থেকেই টার্গেট করে। এরপর তাদের কোম্পানিতে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে নিয়ে আসে এবং প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হতে উদ্বুদ্ধ করে। অফিস কর্মকর্তাদের চালচলনে অভিভূত হয়ে টার্গেটকৃতরা অবসরকালীন প্রাপ্ত পেনশনের টাকা বিনিয়োগ করতেন। কয়েক দিন পরেই অফিসসহ উধাও হয়ে যেতেন অফিসের কর্মকর্তারাও।

তাঁত ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কয়েক কোটি টাকার অর্ডারের ফাঁদে ফেলে ৪০-৫০ হাজার টাকার স্যাম্পল নিতেন। কয়েক কোটি টাকার মালামাল তৈরিতে যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন (সুতা, রং ইত্যাদি) তা সরবরাহের কথা বলে অগ্রিম হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত তারা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের জমি বা নির্মাণাধীন ভবনের ওপর ইন্টারনেট টাওয়ার স্থাপনের প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। কখনো বিভিন্ন এলাকায় আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের বাসায় এবং তার এলাকার মাদরাসা, মসজিদে এনজিওর পক্ষ থেকে বিনা খরচে সৌর প্যানেল বসানোর কথা বলেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। এর বাইরে ইট-পাথর, রড-সিমেন্ট, গার্মেন্ট, চাল, থাই অ্যালুমিনিয়াম, সোলার প্যানেল ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের টার্গেট করে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থের অর্ডারের ফাঁদে ফেলে এবং অর্ডারের ভুয়া চুক্তিপত্র সম্পন্ন করে অগ্রিম বাবদ টাকা আদায় করত।

এই চক্রের হোতা কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার বাসিন্দা বারেক সরকার ওরফে বারেক হাজী (৬৩) ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ১৮ বছর বয়সে সৌদি আরবে পাড়ি দেন। প্রবাস জীবনে সফল হতে না পারলেও আয়ত্ত করেন নানা প্রতারণার কৌশল। দুই বছর পর দেশে ফিরে বনে যান পুরোদস্তুর প্রতারক। তার সুচিন্তিত কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা অল্পদিনের মধ্যে তাকে বিরাট সাফল্য এনে দেয়। ক্রমান্বয়ে প্রতারণার সাম্রাজ্য ছড়িয়ে দেয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ১৯৫৬ সালে জন্ম নেওয়া বারেক প্রাথমিকের গণ্ডিও পার হতে পারেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads