বরিশালের একটি বসতঘরের মধ্যেই রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। এর উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৩৩ কিলো ভোল্ট শক্তিসম্পন্ন লাইন। আবার তার নিচেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ২০টি পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস চলছে। যার মধ্যে একটি দ্বিতল টিনশেড ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে একটি পরিবার। বৃষ্টি বা হালকা বাতাসেও আর্থিংয়ের কারণে গুনগুন শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ওই পরিবারের সদস্যদের।
নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পলাশপুর গুচ্ছগ্রাম ১ নম্বর গলিতে এমন চিত্র সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত করলেও বিষয়টি নিয়ে যেন মাথাব্যথা নেই বিদ্যুৎ বিভাগের। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
জায়গাটি ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ পলাশপুরে গুচ্ছগ্রামের ১ ও ৬ নম্বর ব্যারাকের জমিতে ৫টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ৪ মাস আগে ভবনের মধ্যে ৩৩ কেভি বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছেন হাসান নামের ব্যক্তি। বরাদ্দ পাওয়া মোশারফ হোসেন নামের ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ওই জমি কিনেছেন। ভবনের ছাদের কাজও শেষ হয়েছে। ছাদের অল্প দূরেই রয়েছে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন। এর পাশেই রয়েছে শাহজাহান মিয়ার দ্বিতল টিন ঘর। যে ঘরটির মধ্যেই রয়েছে আরো একটি বিদ্যুতের খুঁটি। যেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাড়া থাকছে অন্য একটি পরিবার। ঝড় অথবা বৃষ্টি হলেই আর্থিং হয়ে ঢেউটিন থেকে গুনগুন শব্দ বের হয়। এর অন্যপাশে ১ নম্বর গুচ্ছগ্রামের জমিতে আরেকটি দ্বিতল বসত বাড়ি নির্মাণ করেছেন আনয়াল বেপারী। তার বাড়ির দেয়াল ঘেঁষেই রয়েছে বিপজ্জনক ৩৩ কেভি বিদ্যুতের লাইনের দুটি খুঁটি। এর আরেকটু সমানে আবদুস ছত্তারের তিন তলা ভবনের পাশ থেকে বিপজ্জনক ওই বিদ্যুতের লাইন বয়ে গেছে। তার পাশেই ঘরের মধ্যে খুঁটি রেখে নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি টিনশেড ঘর। এর পরেই রয়েছে তিনতলা ভবন এ করিম বাস্তুহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এলাকা ঘুরে আরো দেখা গেছে, পলাশপুর এলাকায় রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পলাশপুর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। রূপাতলী পাওয়ার হাউস থেকে ৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন ওই বিদ্যুতের লাইন পৌঁছেছে পলাশপুরের ওই উপকেন্দ্রে। বিদ্যুতের তিন তারের ওই লাইনটি মূল সড়কের পাশ হয়েই পলাশপুর চরমোনাই ট্রলার ঘাটের মোড় পর্যন্ত পৌঁছেছে। পরে সেখান থেকে আলাদা আলাদা খুঁটির মাধ্যমে উপকেন্দ্রে পৌঁছেছে। আলাদা ওই খুঁটির কারণেই প্রায় ২০টি পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উপকেন্দ্রের ইনচার্জ ইখতিয়ার হোসেন বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে এই উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তখন এখানে কোনো বাড়িঘর ছিল না। বিদ্যুতের লাইন ওই একই সময় হয়েছে। এখন যারা বসবাস করছেন, তারা বুঝেশুনেই কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন।
ইনচার্জ ইখতিয়ার আরো বলেন, কে কী করল সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমার দায়িত্ব উপকেন্দ্রের ভেতরে। আমি সেটাই করছি। যিনি এই এলাকার ফিডার ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন, এটি তার দেখার কথা। তিনিই দেখবেন।
এদিকে, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের পাশে খুঁটি রেখে দ্বিতল টিনের ঘর নির্মাণ করা শাহজাহান ফকির বলেন, ৩ শতাংশ জমি নিয়ে আমার একটি ভিটি রয়েছে, যা ২০-২৫ বছর আগে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে আমার নামে বরাদ্দ হয়। ওই জমির একাংশে টিনশেড ও অপর অংশে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তবে খুঁটি রেখেই টিনের ঘরটি নির্মাণ করার কারণে সবসময় আমাদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। বিশেষ করে যে রাতে ঝড়-বৃষ্টি হয় সেই রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়। তাছাড়া প্রতি রাতেই বিদ্যুতের গুনগুন শব্দ শুনে ঘুমাতে যেতে হয় পরিবারের সদস্যদের।
এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন বলেন, যে জমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটা রেকর্ডীয় জমি। কিন্তু ওখানে বিদ্যুতের খুঁটি তারও অনেক আগে থেকে। যারা বিদ্যুতের খুঁটি দখল করে ইমারত বা বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন, তারা অপরাধ করেছেন। তাছাড়া এ বিষয়ে আগে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তাই যারা খুঁটি দখল করে ইমারত নির্মাণ করেছেন, তাদের নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এদিকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য রঞ্জন সরকার বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কেননা এর আগে বিষয়টি কেউ আমাকে বলেনি। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।